বিশাল পাদপ সমাচ্ছন্ন শৈলভূমি। অস্ত সূর্যের আলোয় পাহাড়ী নদী সৈগনের স্রোত ধাবমান সুবর্ণ সর্পের মত মনে হচ্ছিল। যৌবনের মধ্যাহ্ন মহিমায় দীপ্তদেহী এক পুরুষ দাঁড়িয়েছিলেন শাখা-প্রশাখা সমাকীর্ণ এক বনস্পতির পত্রান্তরালে। তাঁর দুটি চোখের কৌতূহলী দৃষ্টি নিবন্ধ ছিল নদীর ওপারের পর্বত থেকে নেমে আসা একটি শোভাযাত্রার ওপর। শোভাযাত্রাটিও নেমে আসছিল উজ্জ্বল, আঁকাবাঁকা একটি সর্পের আকারে। সৈগন খরস্রোতা নদী কিন্তু তার পরিসর সংকীর্ণ। পাহাড়ের আড়ালে সূর্য ডুবে যাবার সঙ্গে সঙ্গে ছায়ার আস্তরণ ঢেকে ফেলল চরাচর। কিছু দূরে সৈগনের ওপর পারাপারের কাষ্ঠনির্মিত একটি সেতু। ততক্ষণে সেই সেতু অতিক্রম করে এপারে এসে পৌঁছেছে শোভাযাত্রা। তারা এখন উঠে আসছে অরণ্যের পাশ ঘেঁষে পাহাড়ের দিকে। অরণ্যের আড়ালে আত্মগোপন করে থাকা সেই পুরুষ সীমাহীন বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলেন শোভাযাত্রাটির দিকে। তরুণী কন্যারা চলেছে সারিবদ্ধভাবে। কারু কারু হাতে প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ, কারু হাতে বা পূজার উপকরণ এবং অন্যান্য সামগ্রী। তরুণীদের উর্ধ্বদেহে কোন আচ্ছাদন নেই। এক একটি শ্বেত এবং রক্তপুষ্পে গাঁথা মালা কণ্ঠলগ্ন হয়ে বক্ষের মধ্যস্থল ছুঁয়ে নেমে এসেছে উন্মুক্ত নাভির ঘূর্ণিতে। আচ্ছাদনহীন পৃষ্ঠে কালো চুলের স্রোত বইছে প্রপাতের মত। বাহুতে অঙ্গুলি প্রমাণ স্ফিত লতা দিয়ে তৈরি সর্প-বলয়। অনুরূপ সর্পাকৃতি লতা দিয়ে বেষ্টিত তরুণীদের ললাট। মাঝে ফণার আকৃতি বিশিষ্ট এক একটি রক্তপুষ্প গোঁজা। অতি সুদর্শন সেই চলচ্ছবি। হাতে ধরা প্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে তরুণীদের মুখমণ্ডল। তারা নিম্নস্বরে একটা গান গাইতে গাইতে আত্মগোপনকারী পথিককে অতিক্রম করে চলে গেল।