নীলবর্ণা তরঙ্গিনীর জল গাঢ় হয়ে উঠল। তীর তরুদের কন্দরে কন্দরে ঘনিয়ে উঠল ছায়া। সেই ছায়া ধীরে ধীরে পর্বতের সোপান বেয়ে উঠে গেল কিন্নর কৈলাসের শিখরে। ইন্দ্ররূপী আদিত্য তখন তাঁর স্যন্দনখানিতে জ্যৈষ্ঠের আকাশ পরিক্রমা শেষ করে অস্তাচলে নামছিলেন। সহসা ছায়ার সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় হল আদিত্যের। অনুরাগের রক্তচ্ছটায় ভেসে গেল পশ্চিম দিগন্ত। আদিত্য বাহু প্রসারিত করে আলিঙ্গন করলেন ছায়াকে। নর্মলীলায় আলোড়িত হল অস্তাচলের আকাশ। অপলক দৃষ্টিতে আলোছায়ার বিহার-লীলা দেখছিল যে কন্যা, সে দেখল সুরত-লীলার সমাপ্তিতে ছায়া গ্রাস করে নিল আদিত্যকে। এই অনুভূতিটুকু বুকের মধ্যে স্পন্দিত হবার সঙ্গে সঙ্গেই কিশোরী কন্যাটি রূপান্তরিত হয়ে গেল উদ্ভিন্ন যৌবনা তরুণীতে। সে পরিচিত পাহাড়ী পথ বেয়ে ফিরে চলল তার আশ্রম নিবাসে। চন্দ্র উঠল ধৌলাধারের শিখরে। পৌর্ণমাসী রজনীর চাঁদ রজত থালিকা থেকে ঢালতে লাগল জ্যোৎস্না ধারা। দক্ষিণ সমীর বয়ে আনল গিরিমল্লিকার সুবাস। চন্দ্রকিরণে স্নান করতে করতে তার মনে হল, সে আজ সন্ধ্যায় নতুন এক জন্ম লাভ করল। ফুলের গন্ধে, বায়ুর প্রবাহে, জ্যোৎস্নার ধারায় অজানা কোন এক রহস্যের আভাস পেয়ে রোমাঞ্চিত হতে লাগল সে।