দক্ষিণ কলকাতার জনবহুল গড়িয়াহাট মােড়ের প্রায় সংলগ্ন বণিক বাড়িতে গৃহবধূ দেবযানী বণিক খুন হয়েছিল ১৯৮৩ সালের ২৮ শে জানুয়ারি। বহুতল বণিক বাড়িটি গড়ে উঠেছিল ২৬ এবং ২৬/৭ হিন্দুস্থান পার্কের প্লট দুটি ঘিরে। বহুতল বাড়িটির মালিক ছিলেন ব্যবসায়ী চন্দ্রনাথ বণিক। গড়িয়াহাট মােড় থেকে ডান । ফুটপাত ধরে গােলপার্কের দিকে যেতে গেলে চোখে পড়বে চন্দ্রনাথ বণিকের বহুতল বাড়িটি। বাড়িটির একতলায় ছিল চন্দ্রনাথবাবুর নিজের ব্যবসা। বাড়িটির সামনের দিকে ছিল হকারদের একাধিক স্টল। বণিকবাড়ি হকারদের স্টলগুলির মাঝেখানে ছিল ফুটপাত। বণিকদের বহুতল বাড়িটি তৈরি হওয়ার সময় অবশ্য সামনের দিকে হকারদের কোন স্টল ছিল না। বণিকবাড়ির উল্টোদিকে ছিল কলকাতার নামজাদা গড়িয়াহাট মার্কেট। কলকাতার লােকজনদের কাছে গড়িয়াহাট মার্কেটটি বিশেষ পরিচিত। হাল-ফ্যাসানের সবকিছুই পাওয়া যায় গড়িয়াহাটায়। সব দিক মিলিয়ে বর্তমান কালের গড়িয়াহাট কলকাতার একটি জনবহুল অঞ্চল। বণিক বাড়ির পাঁচ ও ছয়তলার কিছু অংশ নিয়ে চন্দ্রনাথবাবু তাঁর পরিবারের পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন। চন্দ্রনাথ বণিকের পরিবারের লােকজনদের মধ্যে ছিল তাঁর মা, স্ত্রী, তিন পুত্র, তিন কন্যা এবং একাধিক চাকর-বাকর। বড় ছেলে চন্দন বণিক বাবা চন্দ্রনাথের সাথে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য দেখাশােনা করত। বড় ছেলে চন্দনের বিয়ে দেবেন বলে চন্দ্রনাথবাবু উপযুক্ত পাত্রীর সন্ধানে ছিলেন। পছন্দসই পাত্রীর সন্ধানও তিনি পেয়ে গেলেন। পাত্রী বর্ধমানের বিখ্যাত দত্ত বাড়ির একমাত্র সুন্দরী কন্যা দেব্যানী ওরফে বানু। দেবযানীর বাবা ধনপতি দত্ত ছিলেন বর্ধমানের নামজাদা ব্যবসায়ী। পাত্রপক্ষ তার একমাত্র কন্যাটিকে পছন্দ করায় ১৯৭৫ সালে চন্দ্রনাথ বণিকের বড় ছেলে চন্দনের সাথে ধনপতি দত্তের একমাত্র কন্যা দেবযানীর বিয়ে হয়ে গেল হিন্দুশাস্ত্র মতে এবং সামাজিক প্রথায়। একমাত্র মেয়ের বিয়েতে ধনপতিবাবু প্রচুর খরচপত্র করেছিলেন। বিয়ের পরের দিন দেবযানী নববধূ হিসেবে হিন্দুস্থান পার্কের শ্বশুরবাড়িতে প্রবেশ করেছিল। বিয়ের পর হিন্দুস্থান পার্কের শ্বশুরবাড়িতে দেবযানীর হাসি-কান্না নিয়ে কেটে যাচ্ছিল দিনগুলি।