“স্বপ্ন লজ্জাহীন " বইটি সম্পর্কে কিছু কথাঃ একটা মেয়েকে ভালােবাসে দুই বন্ধু। মেয়েটার নাম মনীষা যাকে ভালােবাসে সুনীল আর হেমন্ত দুজনই। তাদের দুজনের ভালােবাসাই মনীষার কাছে অপ্রকাশ্য। কিন্তু দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে কিন্তু তা দিবালােকের মতই সহজ সরল। একাধারে তারা মনীষাকে পেতে চায়, অন্যদিকে আবার বন্ধুত্বের মায়ায় বন্ধুকে নিজের থেকে বেশি খুশি দেখতে চায়। এই নিয়ে নতুন মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্ব শুরু হয় দুই বন্ধুর। এই দ্বন্দ্বে কেউ কাউকে হারাতে পারে না। কিন্তু কেউ কি জেতে? তাও বােধ হয় নয়। সুনীল আর হেমন্ত কখনােই বুঝতে দেয় না মনীষাকে তাদের ভালােবাসার কথা। অন্যদিকে মনীষাও তাে অতি সামান্য একটা মেয়ে। তাই সেও দুই যুবকের ভালােবাসাকে ধরতে ব্যর্থ হয় বাঃ ধরতে পারলেও দুজনের মধ্যে কাকে বেছে নেবে, সেই সিদ্ধান্তে। আসতে না পেরে বিয়ে করে তৃতীয় একজনকে। সেই তৃতীয়জনের কাছে মনীষা সুখি হিয় কিনা জানি না। কিন্তু মনীষাকে না পেয়ে তার দুই সাবেক 'হলেও হতে পারত প্রেমিক' এর কিচতু হৃদয় ভেঙে ছারখার হয়ে যায়। মনীষাও জীবন থেকে সত্যিকারের দুটো ভালােবাসাকে হারায়। চিরকালের চিরচেনা ভালোবাসার অসংখ্য খণ্ডচিত্রের জোড়া দিয়ে সুনীল গড়ে তুলেছেন লজ্জাহীন স্বপ্নের আসর -“স্বপ্ন লজ্জাহীন”
বিশ শতকের শেষাংশে জন্ম নেওয়া সব্যসাচী একজন বাঙ্গালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট- এমন বহু পরিচয়ে সাহিত্যের অগণিত ক্ষেত্রে তিনি রেখেছেন তাঁর সুকুমার ছাপ। নীললোহিত, সনাতন পাঠক কিংবা কখনো নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই সমূহ। অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪। কিন্তু মাত্র চার বছর বয়সেই স্কুল শিক্ষক বাবার হাত ধরে সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে বিচরণ শুরু হয় কৃত্তিবাস নামের কাব্যপত্রিকার সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৮ সালে প্রকাশ পায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই মানেই পাঠকের কাছে আধুনিকতা আর রোমান্টিকতার মেলবন্ধন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতার বই হলো ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’ ইত্যাদি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সমগ্র ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘সেইসময়’ এবং ‘প্রথম আলো’ তাঁকে এপার, ওপার আর সারাবিশ্বের বাঙালির কাছে করেছে স্মরণীয়। ‘কাকাবাবু-সন্তু’ জুটির গোয়েন্দা সিরিজ শিশুসাহিত্যে তাকে এনে দিয়েছিলো অনন্য পাঠকপ্রিয়তা। তাঁরই উপন্যাস অবলম্বনে কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো চলচ্চিত্র। পাঠক সমাদৃত ভ্রমণকাহিনী ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ কিংবা আত্মজীবনীমূলক ‘অর্ধেক জীবন বই’তে সাহিত্যগুণে তুলে ধরেছিলেন নিজেরই জীবনের গল্প। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চার দশকে তিনি পরিচিত ছিলেন জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে।