স্বর্গের ধড়াচূড়া পরে ভগবান মর্তে নেমে আসেন না। মানবী মাতার গর্ভে আর পাঁচটা শিশুর মতো তাকেও জন্মগ্রহণ করতে হয়। তবু তিনি স্বতন্ত্র । বিশ্বসৃষ্টির আদি-অনন্তস্বরূপ হয়ে তিনি জন্মমাত্র নিজেকে প্রকাশ করেন।
বিধাতার বার্তা বহন করে আনেন যিনি, তাঁকে চিনে নিতে হয় না। তিনি নিজেই হয়ে যান জনগণেশের প্রচণ্ড কৌতুক। মহাভারতের প্রাণপুরুষ শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে এমনি একটা অপার কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছিল তাঁর কালে। কৃষ্ণ মানুষের সন্তান, না ঈশ্বর এই নিয়ে বিতর্ক শেষ হয়নি। নিঃসন্দেহে তিনি মানবসন্তান। ঈশ্বরত্ব তাঁর উপর আরোপিত হয়েছিল। কিন্তু কোন চরিত্রগুণে এবং ব্যক্তিত্বের জোরে কৃষ্ণ ধীরে ধীরে মানবসন্তান থেকে এক অলৌকিক শক্তিধর লীলাময় ভগবানে . উত্তীর্ণ হলেন তার এক শ্রদ্ধাদীপ্ত সংঘাতময় উপন্যাস চতুষ্টয় ‘কৃষ্ণ সুন্দরম'। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিখিলরসামৃতসিন্ধু। তাঁর ঐশ্বর্যের যেমন শেষ নেই, তেমনি তাঁর মাধুর্যের অন্ত নেই। মহাভারত ও ভাগবত অবলম্বন করে লেখক লীলাময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অলৌকিক মহিমময়, দৈবী-মাহাত্ম্য, এবং ঐশ্বরিক শক্তির এক মধুর, রসঘন বাস্তব আলেখ্য নিত্যকালের রসিকজনের কাছে আস্বাদের বস্তু করে তুলেছেন। ড: চন্দ্র'র কৃতিত্ব সম্পর্কে প্রথিতযশা কবি ও সমালোচক অধ্যাপক শ্রীজগদীশ ভট্টাচার্য বলেন : 'পৌরাণিক উপন্যাস রচনায় তুমি সিদ্ধহস্ত।।... আগে যা কেউ করেনি তা যদি কারো দ্বারা সম্ভব হয় তবে তাকে প্রতিভাবান বলতেই হবে। তোমার প্রতিভা অস্বীকার করার উপায় নেই। তোমার লেখনীতে ‘স্বাদু-স্বাদু পদে পদে'। গোপিনীদের সঙ্গে কৃষ্ণের প্রণয় মধুর সম্পর্ক মধুর হতে মধুরতর।... ব্রজভূমিতে যে জীবনকাব্যের সূচনা, দ্বারকায় তার সমাপ্তি
Dr. Dipak Chandra জন্ম : ২রা অগ্রহায়ণ ১৩৪৫। ১৮ নভেম্বর ১৯৩৮ইং। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. বি.এড ও পি-এইচ. ডি ভূতপূর্ব সম্পাদক: স্ফুলিঙ্গ, সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি: রাইটার্স ক্লাব, সহ-সভাপতি: বঙ্গসাহিত্য সংস্কৃতি সম্মিলনী। সক্রিয় সাংস্কৃতিক কর্মী বাংলা আকাদেমি, ভারতীয় সংস্কৃতি ভবন। পুরস্কার: মাইকেল মধুসূদন দত্ত, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়। লেখালেখির হাতেখড়ি কলেজে। ১৯৭১ থেকে নিয়মিত। গল্প, উপন্যাস এবং সমালোচনা গ্রন্থের সংখ্যা ৫৫। এছাড়া সম্পাদিত গ্রন্থ ৪ এবং অভিধান ১। পুরাণকে আধুনিক প্রেক্ষাপটে একালের উপযোগী করে পুনর্নির্মাণ করা যে সম্ভব এবং বহু পাঠকপাঠিকাকে টানা যায় তার এক আশ্চর্য নিরীক্ষায় তিনি সফল। তার সাফল্য সম্পর্কে অধ্যাপক ড. শিশিরকুমার দাস বলেন, “আপনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একজন সুপরিচিত লব্ধপ্রতিষ্ঠ লেখক।...আপনি নিজের একটি স্বতন্ত্র ক্ষেত্র তৈরি করে নিয়েছেন। লেখার স্বতঃস্ফূর্তি এবং কল্পনার শক্তি আপনাকে আজকের বাংলা সাহিত্যে একটি বিশিষ্ট স্থান দিয়েছে।” ঐতিহ্যের পুনর্নির্মাণের সময় তার কাহিনী ঝুঁকেছে মনের অতলান্ত রহস্যের দিকে, সাধারণ মানুষের দিকে। ফলে, পৌরাণিক চরিত্রগুলির ধ্যান-ধারণায়-অনুভূতিতে একটা বদল লক্ষ্য করা গেল।