ভারতে উদ্ভূত রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থাই কৃষ্ণের আবির্ভাবকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছিল। জ্ঞান-বুদ্ধি উদয় হলে কৃষ্ণ ইতিহাসের দাবি পালন করে নিজেই হয়ে উঠেছেন এক ঐতিহাসিক ব্যক্তি । তিনি একজন মানবদরদী প্রাজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তিও বটে। নিঃসহায়, নিঃসম্বল মানুষের শৃঙ্খলমুক্তির জন্যে ইতিহাসের রঙ্গমঞ্চে কৃষ্ণ আবির্ভূত হলেন মানুষের পরিত্রাতারূপে। এক অশান্ত, অস্থির রাজনৈতিক অবস্থার মধ্যে কেটেছে তাঁর সারাজীবন। স্বৈরাচারী শাসন ও পীড়নের নাগপাশে বন্দি অসহায় মানবকুলকে মুক্ত করতে এক প্রতিকূল রাজনৈতিক অবস্থার সঙ্গে তাঁকে নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়েছে। মানবমুক্তির প্রেক্ষাপটে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্প্রীতি, স্থাপন, ঐক্য ও সংহতি চেতনা, যুদ্ধ ও রাজনীতি এবং অখণ্ড ভারত রাষ্ট্র গঠনের তৎপরতা এসেছে অনিবার্যভাবে। গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের ধ্বংসকারী শক্তিগুলির উপর আঘাত হানতেই কৃষ্ণের কংস বধ, নরকাসুর বধ, কালযবন নিধন, জরাসন্ধ হত্যা। চিরস্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্যে কুরুক্ষেত্রের মত মহাযুদ্ধকে আহ্বান করেছেন। ইতিহাসের মহানায়ক শ্রী কৃষ্ণের সেই জীবনকথা ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে মহাকাব্যিক ঘটনার ঘাত- প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে কারিমিরূপ লাভ করেছে। এই কার্যে পাণ্ডবেরা কৃষ্ণের সহায়। কৃষ্ণের সহায়তা ছাড়া পাণ্ডবেরা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হত না । কিন্তু তার জন্যে কৃষ্ণকে এক কঠিন মূল্য দিতে হল। তাঁর স্বজন হারানোর মহাশ্মশানে দাঁড়িয়ে কৃষ্ণ ব্যর্থতার জন্যে পরিতাপ করেছেন। গান্ধারীর অভিযোগগুলি অকপটে স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, “দেবী আমি আপনার পুত্রহস্তা, আমি মিত্রদ্রোহী ও মূঢ়। আপনার রাজ্যনাশের একমাত্র হেতু আমি। আপনি আমাকে অভিশাপ দিন এইভাবেই শ্রীকৃষ্ণের কর্মময় জীবনেতিহাসের একটা পূর্ণ পরিণতি টানা হয়েছে উপন্যাসের আয়তরেখায়।
Dr. Dipak Chandra জন্ম : ২রা অগ্রহায়ণ ১৩৪৫। ১৮ নভেম্বর ১৯৩৮ইং। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. বি.এড ও পি-এইচ. ডি ভূতপূর্ব সম্পাদক: স্ফুলিঙ্গ, সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি: রাইটার্স ক্লাব, সহ-সভাপতি: বঙ্গসাহিত্য সংস্কৃতি সম্মিলনী। সক্রিয় সাংস্কৃতিক কর্মী বাংলা আকাদেমি, ভারতীয় সংস্কৃতি ভবন। পুরস্কার: মাইকেল মধুসূদন দত্ত, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়। লেখালেখির হাতেখড়ি কলেজে। ১৯৭১ থেকে নিয়মিত। গল্প, উপন্যাস এবং সমালোচনা গ্রন্থের সংখ্যা ৫৫। এছাড়া সম্পাদিত গ্রন্থ ৪ এবং অভিধান ১। পুরাণকে আধুনিক প্রেক্ষাপটে একালের উপযোগী করে পুনর্নির্মাণ করা যে সম্ভব এবং বহু পাঠকপাঠিকাকে টানা যায় তার এক আশ্চর্য নিরীক্ষায় তিনি সফল। তার সাফল্য সম্পর্কে অধ্যাপক ড. শিশিরকুমার দাস বলেন, “আপনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একজন সুপরিচিত লব্ধপ্রতিষ্ঠ লেখক।...আপনি নিজের একটি স্বতন্ত্র ক্ষেত্র তৈরি করে নিয়েছেন। লেখার স্বতঃস্ফূর্তি এবং কল্পনার শক্তি আপনাকে আজকের বাংলা সাহিত্যে একটি বিশিষ্ট স্থান দিয়েছে।” ঐতিহ্যের পুনর্নির্মাণের সময় তার কাহিনী ঝুঁকেছে মনের অতলান্ত রহস্যের দিকে, সাধারণ মানুষের দিকে। ফলে, পৌরাণিক চরিত্রগুলির ধ্যান-ধারণায়-অনুভূতিতে একটা বদল লক্ষ্য করা গেল।