নভেলের বাইরে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বাতাস জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই একদিকে আরব সাগরের, অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের জলীয় বাষ্প নিয়ে ভারতবর্ষের স্থলভাগের আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সেই মৌসুমি মেঘপুঞ্জ থেকে ঝরে পড়া জলধারায় ভারতবর্ষের মাটি, পশ্চিমঘাট পর্বতশ্রেণী থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্বে খাসিয়া জয়ন্তিয়া পাহাড়ের মাথা পর্যন্ত, ভিজে ওঠে, নরম হয়, খসে যায়, ধুয়ে যায়, ভেসে যায়, স্রোতের মুখে পড়ে, স্রোতের টানে চলে যায়, স্রোতের ভিতর থেকে গড়ে ওঠে, স্রোতের আর স্থলভূমির সীমায় জেগে ওঠে। উত্তর ভারতে গঙ্গার অববাহিকা অঞ্চল জুড়ে আর দাক্ষিণাত্যের মালভূমি দিয়ে সেই জলরাশি প্রায় ছ-মাস জুড়ে নামতে থাকে বঙ্গোপসাগরের দিকে। যমুনা, গঙ্গা, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী, নর্মদা, ব্রহ্মপুত্রের প্রধান খাত বৃষ্টির জলে ভরে যায়। প্রধান খাতের জলের ধাক্কায় মোহনার কাছাকাছি জল পেছিয়ে যায়। বিহার-উত্তরপ্রদেশের সমতলে, করমণ্ডল উত্তরসরকার বঙ্গীয় উপকূলে নদীর জল পেছিয়ে গিয়ে ভিন্নপথে এগিয়ে আসতে চায়। নদীর খাত বদলায়। সমতলের গড়ন বদলায়। দাক্ষিণাত্যের মালভূমির প্রাচীন পাথরের গভীর খাতও সেই জলের বেগে আঘাতে যেন ভেঙে ভেসে যেতে যায়। রাজ্যের সীমা ভেঙে যায়, রাষ্ট্রের সীমাও কোথাও কোথাও লোপাট হয়। ছ মাস জুড়ে সমুদ্রের জল আকাশপথে ভারতীয় ভূখণ্ড পেরিয়ে স্থলপথে আবার সমুদ্রে ফিরে আসে। একটা বর্ষণচক্র সম্পূর্ণ হয়।
দেবেশ রায় (জন্ম ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৩৬) একজন বাঙালি ভারতীয় সাহিত্যিক। জন্ম অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পাবনা জেলার বাগমারা গ্রামে। ১৯৭৯ সাল থেকে তিনি এক দশক পরিচয় পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস যযাতি। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হল: মানুষ খুন করে কেন (১৯৭৬), মফস্বলী বৃত্তান্ত (১৯৮০), সময় অসময়ের বৃত্তান্ত (১৯৯৩), তিস্তা পাড়ের বৃত্তান্ত (১৯৮৮), লগন গান্ধার (১৯৯৫) ইত্যাদি। তিস্তা পাড়ের বৃত্তান্ত উপন্যাসটির জন্য তিনি ১৯৯০ সালে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত হন।