এই উপন্যাস দ্বন্দ্বের, দ্বন্দ্ব কখনও বাইরের, কখনও বা ভিতরকার। কখনও সমাজের সঙ্গে সম্পর্কের, প্রজন্মের সঙ্গে প্রজন্মের, হৃদয়ের সঙ্গে মেধার, কখনও তারুণ্যের সঙ্গে মধ্যবয়েসের, ব্যক্তির সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের, শুভবুদ্ধির সঙ্গে আবেগের, সত্তার সঙ্গে সত্তার। কীভাবে দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে জটিলতর হচ্ছে নাগরিক জীবনের গতিপথ। সময়ের দাবি মেটানোর প্রয়াস টান দিচ্ছে অভ্যস্ত আত্মপরিচয়ের ভিত্তিমূলে। এই উপন্যাস আমাদের শুধু ধন্দেই ফেলে না, সমস্যা চেনানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দেয় সমাধানেরও। আধুনিক নারীজীবনের কয়েকটি জরুরি সমস্যার দিক এখানে উদ্ঘাটিত হয়েছে। সংস্কার, সংস্কৃতি, দেশ, কাল, প্রজন্মের ব্যবধান ঘুচে যাচ্ছে এক লহমায় নতুন করে নিজেকে চিনে নিচ্ছে অংশুমালা, সঞ্জয়, মালিনী। পুষ্প, সৌম্য, সালমা আর ওয়েন্ডি এসে দাঁড়াচ্ছে একই পংক্তিতে। এক দশকের বেশি আগে লেখা পরীক্ষামূলক উপন্যাস ‘বামাবোধিনী'র চরিত্রগুলি এবারে অন্য এক পটভূমিকায় পরিণতির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ‘অভিজ্ঞান’-এ। তাদের সঙ্গে পাঠকও চিনে নেবেন দিনবদলের রূপ। এই সময়ের যাত্রায় পটপরিবর্তন হয়েছে সামাজিক এবং রাজনৈতিক চালচিত্রের –সেই দর্পণে কিন্তু মুখচ্ছবিরও ঘটছে আবশ্যিক কিছু কিছু বদল।
নবনীতা দেবসেন দক্ষিণ কলকাতায় হিন্দুস্থান পার্কে তাঁর বাবা- মা'র 'ভালবাসা'(এখনো সেখানেই বসবাস করেন) গৃহে জন্মগ্রহন করেন । পিতা নরেন্দ্র দেব ও মাতা রাধারানী দেবী সেযুগের বিশিষ্ট কবি দম্পতি। ছেলেবেলায় এক বিশেষ সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশে তিনি বড় হয়েছেন। বাংলা ও ইংরেজি ছাড়া উনি হিন্দি, ওড়িয়া, অসমীয়া, ফরাসী, জার্মান, সংস্কৃত এবং হিব্রু ভাষাগুলি পড়তে পারেন। গোখলে মেমোরিয়াল গার্লস, লেডি ব্রেবোর্ণ ও প্রেসিডেন্সি কলেজ, যাদবপুর , হার্ভার্ড, ইণ্ডিয়ানা (ব্লুমিংটন) ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা করেছেন। ১৯৭৫- ২০০২ তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপিকা ও বেশ কিছুকাল বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপেরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন। তাকে তুলনামূলক সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট অথরিটি মানা হয়। যাদবপুরে তিনি কবি বুদ্ধদেব বসু ও সুধীন্দ্রনাথ দত্তের স্নেহধন্য ছাত্রী ছিলেন। ১৯৯৯ সালে তিনি সাহিত্য একদেমি পুরস্কার পান তার আত্মজীবনী মূলক রম্যরচনা 'নটী নবনীতা' গ্রন্থের জন্যে। এছাড়াও তিনি মহাদেবী বর্মা ও ভারতীয় ভাষা পরিষদ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেও বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৫৯ এ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'প্রথম প্রত্যয়' প্রকাশিত হয় ও প্রথম উপন্যাস 'আমি অনুপম' ১৯৭৬ এ। কবিতা, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, ভ্রমণ কাহিনী, উপন্যাস মিলে তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৩৮। এখনো নিয়মত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করেন। ১৯৬০ এ তিনি বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ (পরবর্তীকালে নোবেলজয়ী) অমর্ত্য সেনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ও তাদের দুই কন্যা। জ্যেষ্ঠা অন্তরা সাংবাদিক ও সম্পাদক এবং কনিষ্ঠা নন্দনা অভিনেত্রী ও সমাজকর্মী।