“বিশ্বাসঘাতক” বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপের কথা: ‘পারমাণবিক শক্তি ব্যাপারটা সম্বন্ধে আমাদের ভাসা-ভাসা ধারণা আছে। হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে তার নারকীয় কাণ্ডকারখানার কথাও শুনেছি। কিন্তু মোদা ব্যাপারটা যে কী, তা আমরা জানতাম না।জানার প্রয়োজন এতদিন বোধ করিনি। যা ছিল একান্ত গোপন তার অনেকটাই আজি জনসাধারণকে জানতে দেওয়া হয়েছে । চিন, ভারত, পাকিস্তান ও উত্তর- পৃথিবীর আটটি দেশ এ তথ্য জেনে ফেলেছে।অট্যাম বোমা ফাটিয়েছে। বিদেশি ভাষায় পপুলার সায়েন্স-জাতীয় বইয়ে এ আলোচনা দেখেছি। বাংলা ভাষায় সে আলোচনা আমার নজরে পড়েনি। গত পচিশ-ত্রিশ বছর এ-বিষয়ে অজ্ঞ ছিলাম--তা দুনিয়ার অনেক বৈজ্ঞানিক-তথ্যের বিষয়েই তো কিছু জানি না, কী ক্ষতি হয়েছে তাতে ?—ভাবখানা ছিল এই। এতদিনে মনে হচ্ছে-ক্ষতি হয় । “বিশ্বাসঘাতক” বইয়ের পরবর্তী ফ্ল্যাপের কথা: শেষে জনৈক বৈজ্ঞানিক একক প্রচেষ্টায় একটি গোপন তথ্য রাশিয়ায় পাচার করেন। মানব-সভ্যতার ইতিহাসে আর্থিক মূল্যমানের দিক থেকে এটাই নাকি সবচেয়ে বড় জাতের বিশ্বাসঘাতকতা। উপজীব্য। গ্রন্থটিকে উপন্যাস বলতে বাধে, কারণ উপন্যাসে কেমিস্ট্রির বিজ্ঞান-গ্রন্থে রোমান্টিক প্ৰেম-কাহিনি অপাংক্তেয় । গোয়েন্দা যেখানে অপরাধীকে চিহ্নিত করছে না, অপরাধী স্বয়ং এগিয়ে আসছে ধরা দিতে—ডস্টয়েভস্কির ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’-এর নায়কের মতো—সেখানে গোয়েন্দা কাহিনির প্রশ্নই ওঠে না। তাহলে প্রকাশক হিসাবে এর জাতনির্ণয় করি কীভাবে ? প্রশ্নটা আমরা লেখকের কাছে পেশ করেছিলাম। শুনলাম, তিনি নিজেই নাকি কৌতুহলী: গ্রন্থগারিক একে কোন আলমারিতে স্থান দেন।
Narayon Sanyal ( ২৬শে এপ্রিল, ১৯২৪ - ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৫) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত লেখক। এছাড়াও তিনি একজন পুর প্রকৌশলী । নিত্য নতুন বিষয়বস্তু নির্বাচন ছিল তাঁর রচনাশৈলীর এক বৈশিষ্ট্য। লেখকের আদি নিবাস নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর। তিনি কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র ছিলেন। স্কুলের খাতায় নাম ছিল নারায়নদাস সান্যাল। ১৯৪৮ সালে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বি.ই. সম্পন্ন করেন। তিনি ইন্সটিট্যুট অব ইঞ্জিনিয়ার্স (ইন্ডিয়া)-এর ফেলো ছিলেন। ১৯৮২ সালে সরকারী চাকুরী থেকে অবসর নিয়েছিলেন। সাহিত্যজগতে নারায়ন সান্যাল তাঁর বকুলতলা পি এল ক্যাম্প ও দন্ডক শবরি গ্রন্থের জন্য বিশেষভাবে পরিচত। পি.ডব্লু.ডি তে চাকরি করাকালীন দণ্ডকারণ্য অঞ্চলে তাঁর পোস্টিং হয়, জীবনের অভিজ্ঞতায় এই দুটি উপন্যাস লেখেন যা বিদগ্ধ পাঠক মহলে সমাদৃত হয়। এছাড়া বিজ্ঞান, শিল্প স্থাপত্য ভাস্কর্য ও সামাজিক, ঐতিহাসিক উপন্যাস প্রচুর লিখেছেন। শিশু কিশোরদের জন্যেও তাঁর রচনা সুখপাঠ্য। তাঁর অন্যান্য রচনাগুলির মধ্যে বিশ্বাসঘাতক, ষাট একষট্টি, হে হংসবলাকা, নক্ষত্রলোকের দেবতাত্মা, আবার যদি ইচ্ছা করো, অরণ্য দন্ডক, অশ্লীলতার দায়ে, না মানুষের পাঁচালী উল্লেখযোগ্য। রহস্য গোয়েন্দা কাহিনীও লিখেছেন, তাঁর কাঁটা সিরিজ নামে খ্যাত বইগুলির মূল চরিত্র ব্যারিস্টার পি কে বাসু স্ট্যানলি গার্ডেনারের প্যারি ম্যাসন এর আদলে তৈরি। তার রচিত কাহিনী নাগচম্পা (যদি জানতেম), সত্যকাম, পাষণ্ড পন্ডিত চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। রবীন্দ্র পুরস্কার - অজন্তা অপরূপা-১৯৬৯, বঙ্কিম পুরস্কার - রূপমঞ্জরী-২০০০, পুরস্কারে ভূষিত হন।