দুই ৷ উত্তরে রায়পুর থেকে যাত্রা শুরু করেছে সাড়ে তিনশ মাইল দীর্ঘ এক রাজপথ ন্যাশনাল হাইওয়ে নং তেতাল্লিশ। মধ্যপ্রদেশ, উড়িষ্যা আর অন্ধ্র তিনটি প্রদেশের মাটির তিলক কপালে ছুঁইয়ে যাত্রা সমাপ্ত করেছে সুদূর ভিজিয়ানাগ্রামে। মাঝামাঝি জায়গায় জগদলপুর, বাস্তার জেলার সদর। রায়পুর থেকে জগদলপুর প্রায় দু'শ মাইল। একটানা যাওয়া যায় বাসে। আরামদায়ক ডি-লাক্স বাস কিন্তু পথের খানাখন্দ সে সুখ ভোগ করতে দেবে না আপনাকে। আপনি যদি রায়পুর থেকে মোটরে রওনা হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন আপনার পাশে পাশে ছুটে চলেছে ছোট রেলের একজোড়া লাইন। লেভেল-ক্রসিং-এর বুড়ি ছুঁয়ে কখনও ডাইনে কখনও বাঁয়ে বাঁধের আড়ালে বনের পিছনে সারাটা পথ সে লুকোচুরি খেলতে খেলতে ছুটেছে আপনার সাথে সমানতালে। বেশীদুর কিন্তু সে যেতে পারবে না। রায়পুর থেকে মাইল চল্লিশ ছুটে ধাম্তারি স্টেশনে এসে হাঁফিয়ে পড়বে বেচারী। খেলা সাঙ্গ হবে তার। ধামৃতারির কাঠগুদাম আর কাঠচেরাই-এর কারখানা পিছনে ফেলে আপনি এগিয়ে চললেন সোজা দক্ষিণমুখো। পথ আর পথ। ফুরোয় না যেন । পঁচাশি মাইলের মাথায় ছোট্ট শহর কাঁকেরে পৌঁছে আপনাকে একটু ভাবনায় পড়তে হবে। ডাইনে বাঁক নেবেন, না সোজা দক্ষিণেই যাবেন ?
Narayon Sanyal ( ২৬শে এপ্রিল, ১৯২৪ - ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৫) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত লেখক। এছাড়াও তিনি একজন পুর প্রকৌশলী । নিত্য নতুন বিষয়বস্তু নির্বাচন ছিল তাঁর রচনাশৈলীর এক বৈশিষ্ট্য। লেখকের আদি নিবাস নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর। তিনি কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র ছিলেন। স্কুলের খাতায় নাম ছিল নারায়নদাস সান্যাল। ১৯৪৮ সালে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বি.ই. সম্পন্ন করেন। তিনি ইন্সটিট্যুট অব ইঞ্জিনিয়ার্স (ইন্ডিয়া)-এর ফেলো ছিলেন। ১৯৮২ সালে সরকারী চাকুরী থেকে অবসর নিয়েছিলেন। সাহিত্যজগতে নারায়ন সান্যাল তাঁর বকুলতলা পি এল ক্যাম্প ও দন্ডক শবরি গ্রন্থের জন্য বিশেষভাবে পরিচত। পি.ডব্লু.ডি তে চাকরি করাকালীন দণ্ডকারণ্য অঞ্চলে তাঁর পোস্টিং হয়, জীবনের অভিজ্ঞতায় এই দুটি উপন্যাস লেখেন যা বিদগ্ধ পাঠক মহলে সমাদৃত হয়। এছাড়া বিজ্ঞান, শিল্প স্থাপত্য ভাস্কর্য ও সামাজিক, ঐতিহাসিক উপন্যাস প্রচুর লিখেছেন। শিশু কিশোরদের জন্যেও তাঁর রচনা সুখপাঠ্য। তাঁর অন্যান্য রচনাগুলির মধ্যে বিশ্বাসঘাতক, ষাট একষট্টি, হে হংসবলাকা, নক্ষত্রলোকের দেবতাত্মা, আবার যদি ইচ্ছা করো, অরণ্য দন্ডক, অশ্লীলতার দায়ে, না মানুষের পাঁচালী উল্লেখযোগ্য। রহস্য গোয়েন্দা কাহিনীও লিখেছেন, তাঁর কাঁটা সিরিজ নামে খ্যাত বইগুলির মূল চরিত্র ব্যারিস্টার পি কে বাসু স্ট্যানলি গার্ডেনারের প্যারি ম্যাসন এর আদলে তৈরি। তার রচিত কাহিনী নাগচম্পা (যদি জানতেম), সত্যকাম, পাষণ্ড পন্ডিত চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। রবীন্দ্র পুরস্কার - অজন্তা অপরূপা-১৯৬৯, বঙ্কিম পুরস্কার - রূপমঞ্জরী-২০০০, পুরস্কারে ভূষিত হন।