আমার কাহিনীর প্রথম নায়ক-কী মুশকিল দেখুন-বয়সে প্রবীণ হলেও একটি নিটোল তরুণ। তাঁকে আমি প্রথম দেখেছিলাম একান্ন সালে, প্রায় পঁচিশ বছর আগে। তখন তাঁর বয়স ঊনসত্তর। ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৫১। তারিখটা নির্ভুলভাবে বলতে পারছি, কারণ আমার দিনপঞ্জিকায় ঘটনাটা বিস্তারিত লেখা আছে। সে অনেকদিন আগেকার কথা-হাফ-প্যান্ট পরার যুগকে সবে পাড়ি দিয়ে এসেছি। বর্তমান এডিশনে দেখছি সে ঘটনার সুবর্ণ-জয়ন্তী আসন্ন। আজ্ঞে না। হিসাবে ভুল করিনি কিছু। পঞ্চাশ থেকে পঁচিশ বাদ গেলে কত বাকি থাকে সেটুকু, অঙ্ক কষে বার করবার মত গণিতশাস্ত্রে অধিকার আমারও আছে। বুঝতে পারছি, 'কৈফিয়ত'-এর পালা এখনও শেষ হয়নি। 'হাফ-প্যান্ট পরার যুগকে সবে পাড়ি দেওয়া' মানে বাল্য বা কৈশোর অতিক্রমণ নয়। সে নেহাত ব্যক্তিগত কথা। আপনারা এভাবে কৈফিয়ত দাবী না করলে সে-কথা স্রেফ চেপে যেতেই চেয়েছিলাম। কিন্তু উপায় নেই-এত কথা যখন হল তখন ব্যাখ্যাটা দাখিল করতেই হচ্ছে: উনিশ শ একান্ন সাল। আমি তখন সদ্য-চাকুরে। অ্যাসিস্টেন্ট এঞ্জিনিয়ার। মেদিনীপুরে পোস্টেড। শুধু সদ্য-চাকুরে নয়, সদ্য-বিবাহিতও। আমার বাবা শিবপুর এঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ১৮৯৬ সালে বি. ই. পাস করে বৃহত্তর বেঙ্গল পি. ডালুতে ঢুকেছিলেন গত শতাব্দির একেবারে শেষাশেষি।
Narayon Sanyal ( ২৬শে এপ্রিল, ১৯২৪ - ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৫) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত লেখক। এছাড়াও তিনি একজন পুর প্রকৌশলী । নিত্য নতুন বিষয়বস্তু নির্বাচন ছিল তাঁর রচনাশৈলীর এক বৈশিষ্ট্য। লেখকের আদি নিবাস নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর। তিনি কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র ছিলেন। স্কুলের খাতায় নাম ছিল নারায়নদাস সান্যাল। ১৯৪৮ সালে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বি.ই. সম্পন্ন করেন। তিনি ইন্সটিট্যুট অব ইঞ্জিনিয়ার্স (ইন্ডিয়া)-এর ফেলো ছিলেন। ১৯৮২ সালে সরকারী চাকুরী থেকে অবসর নিয়েছিলেন। সাহিত্যজগতে নারায়ন সান্যাল তাঁর বকুলতলা পি এল ক্যাম্প ও দন্ডক শবরি গ্রন্থের জন্য বিশেষভাবে পরিচত। পি.ডব্লু.ডি তে চাকরি করাকালীন দণ্ডকারণ্য অঞ্চলে তাঁর পোস্টিং হয়, জীবনের অভিজ্ঞতায় এই দুটি উপন্যাস লেখেন যা বিদগ্ধ পাঠক মহলে সমাদৃত হয়। এছাড়া বিজ্ঞান, শিল্প স্থাপত্য ভাস্কর্য ও সামাজিক, ঐতিহাসিক উপন্যাস প্রচুর লিখেছেন। শিশু কিশোরদের জন্যেও তাঁর রচনা সুখপাঠ্য। তাঁর অন্যান্য রচনাগুলির মধ্যে বিশ্বাসঘাতক, ষাট একষট্টি, হে হংসবলাকা, নক্ষত্রলোকের দেবতাত্মা, আবার যদি ইচ্ছা করো, অরণ্য দন্ডক, অশ্লীলতার দায়ে, না মানুষের পাঁচালী উল্লেখযোগ্য। রহস্য গোয়েন্দা কাহিনীও লিখেছেন, তাঁর কাঁটা সিরিজ নামে খ্যাত বইগুলির মূল চরিত্র ব্যারিস্টার পি কে বাসু স্ট্যানলি গার্ডেনারের প্যারি ম্যাসন এর আদলে তৈরি। তার রচিত কাহিনী নাগচম্পা (যদি জানতেম), সত্যকাম, পাষণ্ড পন্ডিত চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। রবীন্দ্র পুরস্কার - অজন্তা অপরূপা-১৯৬৯, বঙ্কিম পুরস্কার - রূপমঞ্জরী-২০০০, পুরস্কারে ভূষিত হন।