কী বললেন? ইনি কি সেই বিখ্যাত গাইনি.... হ্যাঁ। ডাঃ চৌধুরী মারা গিয়েছেন? আত্মহত্যা করেছেন ? বেনেপুকুর থানার বড়োবাবু এক নিঃশ্বাসেই বলে যান, আমি এখুনি আসছি। দেখবেন, কেউ যেন ওঁর ঘরে না যায়। প্লিজ, কেউ যেন ওঁর বডি বা রিভলবার টাচ্না করেন। হ্যাঁ, বড়োবাবু এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে একজন সাবইন্সপেক্টর আর তিনজন কনস্টেবলকে নিয়ে জিপে রওনা দেন ডাঃ চৌধুরীর বাড়ি। হাজার হোক কলকাতার বিখ্যাত গাইনি। তাইতো এরই মধ্যে খবরটা আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যেই পাঁচ-সাতজন বিখ্যাত ডাক্তার আর ডাঃ চৌধুরীর কয়েকজন বিশিষ্ট ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু এসে হাজির হয়েছেন। বাড়ির সামনেও বেশ ভিড় জমেছে। বড়োবাবু জিপ থেকে নেমে বাড়ির ভিতরে পা দিতে দিতেই কনস্টেবলদের দিকে এক ঝলক তাকিয়েই বললেন, লোকজন সরিয়ে দিন ; আর বাড়ির মধ্যে কাউকে ঢুকতে দেবেন না । প্রায় লাফাতে লাফাতেই উনি দোতলায় উঠে যান। ওর ঠিক পিছন পিছন সাব- ইন্সপেক্টর। সিঁড়ির সামনেই বেশ কয়েকজনকে গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই বড়োবাবু জিজ্ঞেস করেন, কোন ঘরে ? এইতো এই ঘরে। দু' একজন বড়োবাবুর পিছন পিছন ঘরের দিকে পা বাড়াতেই সাব-ইন্সপেক্টর বললেন, প্লিজ, কেউ ভিতরে আসবেন না । বিরাট খাটের উপর পড়ে আছে ডাঃ সুধাকর চৌধুরীর প্রাণহীন দেহ। ডান হাতের পাশেই পড়ে আছে রিভলবার। বালিশ-বিছানা রক্তে ভেসে গেছে। বেশ কয়েক মিনিট দেহটার দিকে তাকিয়ে থাকার পর বড়োবাবু ঘরের চারদিকে দৃষ্টিটা ঘুরিয়ে নেন।
বাংলা সাহিত্যের এই খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক নিমাই ভট্টাচার্য ১৯৩১ সালের ১০ এপ্রিল কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আদি নিবাস তৎকালীন যশোর জেলার মাগুরা মহকুমার (বর্তমান জেলা) শালিখা থানার অন্তর্গত শরশুনা গ্রামে। তাঁর পিতার নাম সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। নিমাই ভট্টাচার্য বাংলাদেশের বগুড়া জেলার কালীতলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর কন্যা দীপ্তি ভট্টাচার্যকে বিবাহ করেন। কলকাতার টালিগঞ্জের শাশমল রোডের বাসায় বসবাস করতেন তিনি। শিক্ষাজীবন: নির্মম অদৃষ্ট সাড়ে তিন বছর বয়সে তিনি মাতৃহীন হন। পিতার সীমিত আয়ে অকল্পনীয় দুঃখ কষ্ট অভাব অভিযোগের মধ্যে ভর্তি হলেন কলকাতা কর্পোরেশন ফ্রি স্কুলে। কলকাতা রিপন স্কুলে কিছুদিন তিনি পড়াশুনা করার পর যশোরে ফিরে আসেন। ১৯৪১ সালে যশোর সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনে চতুর্থ শেণীতে ভর্তি হন এবং নবম শ্রেণী পর্যন্ত সেখানে পড়াশুনা করেন। তাঁর পিতা সুরেন্দ্রনাথ বাবুও এক সময় সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনের ছাত্র ও পরবর্তীতে শিক্ষক ছিলেন। দেশ বিভাগের পর নিমাই ভট্টাচার্য পিতার সঙ্গে কলকাতায় চলে যান এবং পুনরায় কলকাতায় রিপন স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকেই তিনি ১৯৪৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর তিনি কলকাতা রিপন কলেজে ভর্তি হন এবং রিপন কলেজ থেকে আই. এ পাশ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫২ সালে তিনি বি. এ পাশ করেন। সাংবাদিকতার মাধ্যমেই তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। কিন্তু প্রথম অবস্থায় সেখানেও তিনি ভাগ্যের বিড়ম্বনার স্বীকার হন। নিমাই ভট্টাচার্যের সাহিত্য চিন্তা তাঁর জীবনচর্চার একান্ত অনুগামী হয়ে দেখা দিয়েছে। ১৯৬৩ সালে তাঁর লেখা একটি উপন্যাস কলকাতার সাপ্তাহিক ‘অমৃতবাজার’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় এবং সাহিত্যামোদীদের নিকট ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। পরবর্তীকালে ‘রাজধানী নৈপথ্য’ রিপোর্টার. ভি. আই. পি এবং পার্লামেন্ট স্টীট নামক চারখানি উপন্যাস ঐ একই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে সাংবাদিকতার পাশাপাশি নিমাই ভট্টাচার্য পূর্ণোদ্যমে আরো আরো উপন্যাস লেখা শুরু করেন। ‘মেমসাহেব’, ‘ডিপেস্নাম্যাট’, ‘মিনিবাস’, ‘মাতাল’, ‘ইনকিলাব’, ‘ব্যাচেলার’, ‘ইমনক্যলাণ’, ‘ডিফেন্স’, ‘কলোনী’, ‘প্রবেশ নিষেধ’, ‘কেরানী’, ‘ভায়া ডালহৌসী’, ‘হকার্স কর্নার’, ‘রাজধানী এক্সপ্রেস’, ‘নিমন্ত্রণ’, ‘নাচনী’, ‘অ্যাংলো ইন্ডিয়ান’, ‘ডার্লিং’, ‘ম্যাডাম’, ‘ওয়ান আপ-টু-ডাউন’, ‘গোধুলিয়া’, ‘প্রিয়বরেষু’, ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’, ‘মোগল সরাই জংশন’, ‘ইওর অনার’, ‘ককটেল’, ‘অনুরোধের আসর’, ‘যৌবন নিকুঞ্জে’, ‘শেষ পরানির কড়ি’, ‘হরেকৃষ্ণ জুয়েলার্স’, ‘পথের শেষে’ প্রভৃতি প্রকাশিত উপন্যাসগুলি উল্লেখযোগ্য। নিমাই ভট্টাচার্যের লেখা উপন্যাসগুলোতে বিষয়গত বৈচিত্র্যতার ছাপ প্রস্ফূটিত হয়ে উঠেছে।