আর কেউ নয়, স্বয়ং স্যার সি. এস. বাস, হ,ইস্কীর গেলাসটা উঁচু করে ধরে গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বললেন, লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন, প্লীজ জয়েন মী ইন ওয়েলকামিং মিসেস পারমিতা অ্যান্ড মিস্টার অর্ণব চৌধুরী........... স্যার সি. এস. নিজের গেলাসটি প্রথমে পারমিতার, তারপর মিঃ চৌধুরীর গেলাসে মৃদু স্পর্শ করিয়েই বললেন, চিয়ার্স'! চিয়ার্স ! শতাধিক নারী-পুরুষের মিলিত কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হলো, চিয়ার্স ! অনেকেই চৌধুরী দম্পতিকে ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন জানালেন । ওয়াইনের গেলাসটি হাতে নিয়ে অত্যন্ত ধীর পদক্ষেপে লেডি প্রতিমা -বাস, পারমিতার কাছে এসে বললেন, ইউ আর রিয়েলী ভেরি লাকী । অনেক ভাগ্য করে না জন্মালে নিউ এম্পায়ার ক্লাবের মেম্বার হওয়া যায় না। কৃতজ্ঞতার হাসি হেসে পারমিতা বলল, সে তো একশ' বার । ইন্ডিয়াতে তো এরকম ক্লাব আর নেই । লেডী বাস, চোখ দুটো বড় বড় করে বললেন, হোয়াই ওনলি ইন ইন্ডিয়া ? পাকিস্তান, সিলোন, বার্মা – আই মিন অরিজিন্যাল ইন্ডিয়ান এম্পায়ারের কোথাও এর জুড়ি নেই ৷ পারমিতা সম্মতি জানিয়ে বলে, আই সী ! লেডী বাস, ওয়াইনের গেলাসে একটু চুমকে দিয়ে একটু হাসেন ।জিজ্ঞেস করেন, হ্যাভ ইউ বিন টু সিঙ্গাপার ? আই অ্যাম সরি, আই......... লেডি বাস, ওর উত্তর না শনেই বলে যান, আমাদের নিয়ারেস্ট রাইভ্যাল হচ্ছে সিঙ্গাপারের ফার ইস্টার্ন এম্পায়ার ক্লাব । পারমিতা শত্রু, মাথা নাড়ে। মাখে কিছ, বলে না । এই হোল, সাব-কন্টিনেন্টে আর কোনো ক্লাব নেই যারা আমাদের ধারেকাছে আসতে পারে।
বাংলা সাহিত্যের এই খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক নিমাই ভট্টাচার্য ১৯৩১ সালের ১০ এপ্রিল কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আদি নিবাস তৎকালীন যশোর জেলার মাগুরা মহকুমার (বর্তমান জেলা) শালিখা থানার অন্তর্গত শরশুনা গ্রামে। তাঁর পিতার নাম সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। নিমাই ভট্টাচার্য বাংলাদেশের বগুড়া জেলার কালীতলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর কন্যা দীপ্তি ভট্টাচার্যকে বিবাহ করেন। কলকাতার টালিগঞ্জের শাশমল রোডের বাসায় বসবাস করতেন তিনি। শিক্ষাজীবন: নির্মম অদৃষ্ট সাড়ে তিন বছর বয়সে তিনি মাতৃহীন হন। পিতার সীমিত আয়ে অকল্পনীয় দুঃখ কষ্ট অভাব অভিযোগের মধ্যে ভর্তি হলেন কলকাতা কর্পোরেশন ফ্রি স্কুলে। কলকাতা রিপন স্কুলে কিছুদিন তিনি পড়াশুনা করার পর যশোরে ফিরে আসেন। ১৯৪১ সালে যশোর সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনে চতুর্থ শেণীতে ভর্তি হন এবং নবম শ্রেণী পর্যন্ত সেখানে পড়াশুনা করেন। তাঁর পিতা সুরেন্দ্রনাথ বাবুও এক সময় সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনের ছাত্র ও পরবর্তীতে শিক্ষক ছিলেন। দেশ বিভাগের পর নিমাই ভট্টাচার্য পিতার সঙ্গে কলকাতায় চলে যান এবং পুনরায় কলকাতায় রিপন স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকেই তিনি ১৯৪৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর তিনি কলকাতা রিপন কলেজে ভর্তি হন এবং রিপন কলেজ থেকে আই. এ পাশ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫২ সালে তিনি বি. এ পাশ করেন। সাংবাদিকতার মাধ্যমেই তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। কিন্তু প্রথম অবস্থায় সেখানেও তিনি ভাগ্যের বিড়ম্বনার স্বীকার হন। নিমাই ভট্টাচার্যের সাহিত্য চিন্তা তাঁর জীবনচর্চার একান্ত অনুগামী হয়ে দেখা দিয়েছে। ১৯৬৩ সালে তাঁর লেখা একটি উপন্যাস কলকাতার সাপ্তাহিক ‘অমৃতবাজার’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় এবং সাহিত্যামোদীদের নিকট ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। পরবর্তীকালে ‘রাজধানী নৈপথ্য’ রিপোর্টার. ভি. আই. পি এবং পার্লামেন্ট স্টীট নামক চারখানি উপন্যাস ঐ একই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে সাংবাদিকতার পাশাপাশি নিমাই ভট্টাচার্য পূর্ণোদ্যমে আরো আরো উপন্যাস লেখা শুরু করেন। ‘মেমসাহেব’, ‘ডিপেস্নাম্যাট’, ‘মিনিবাস’, ‘মাতাল’, ‘ইনকিলাব’, ‘ব্যাচেলার’, ‘ইমনক্যলাণ’, ‘ডিফেন্স’, ‘কলোনী’, ‘প্রবেশ নিষেধ’, ‘কেরানী’, ‘ভায়া ডালহৌসী’, ‘হকার্স কর্নার’, ‘রাজধানী এক্সপ্রেস’, ‘নিমন্ত্রণ’, ‘নাচনী’, ‘অ্যাংলো ইন্ডিয়ান’, ‘ডার্লিং’, ‘ম্যাডাম’, ‘ওয়ান আপ-টু-ডাউন’, ‘গোধুলিয়া’, ‘প্রিয়বরেষু’, ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’, ‘মোগল সরাই জংশন’, ‘ইওর অনার’, ‘ককটেল’, ‘অনুরোধের আসর’, ‘যৌবন নিকুঞ্জে’, ‘শেষ পরানির কড়ি’, ‘হরেকৃষ্ণ জুয়েলার্স’, ‘পথের শেষে’ প্রভৃতি প্রকাশিত উপন্যাসগুলি উল্লেখযোগ্য। নিমাই ভট্টাচার্যের লেখা উপন্যাসগুলোতে বিষয়গত বৈচিত্র্যতার ছাপ প্রস্ফূটিত হয়ে উঠেছে।