তোমাদের জন্য আজ যে গল্পটা লিখতে বসেছি তা হল একটা বাঘ শিকারের গল্প। বাঘের নাম শুনলে কার না বুক গুড় গুড় করে ওঠে বল। কিন্তু আমার এই গল্পটা তত ভয়ের নয়, বরং বলতে পার—মজার আর হাসির। গোটা গল্পটা পড়ে কে কিরকম হেসেছ আর কতটা মজা পেয়েছ যদি আমাকে জানাও ভীষণ খুশি হব। বাঙলাদেশের নাম কে আর শোনেনি! তোমরাও শুনেছ। যে দেশটার রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমান ছিলেন, আমি তার কথাই বলছি। আটাশ ঊনত্রিশ বছর আগে এই বাঙলাদেশের নাম ছিল পূর্ব বাঙলা। তখন পূর্ব বাঙলা আর আমাদের এই পশ্চিম বাঙলা মিলিয়ে ছিল আস্ত বাঙলাদেশ। তারপর কেমন করে পূর্ব বাঙলা আলাদা হয়ে শেষ পর্যন্ত আজকের এই বাঙলাদেশ হয়ে দাঁড়াল সে-সব তোমরা নিশ্চয়ই ইতিহাসের বইতে পড়েছ। যারা পড়নি তারা পড়ে নিও। আমার এই গল্পটা তো ইতিহাসের গল্প না, বাঘের গল্প। কাজেই বাঘের কথাতেই আসা যাক। কিন্তু তার আগে দু-একটা অন্য দরকারি কথা বলে নিই। আটাশ ঊনত্রিশ বছর আগে তখনকার সেই পূর্ব বাঙলার একটা গ্রামে ছিল আমার মামাবাড়ি। গ্রামটার নাম সোনারঙ। ভারি সুন্দর নাম, তাই না? আমার আর আমার এক মাসতুতো ভাই বিনুর ছেলেবেলাটা মামার বাড়িতে কেটেছে। মামাদের বাড়িটা ছিল গ্রামের একেবারে শেষ মাথায়। বাড়ির পর মস্ত আমবাগান, তারপর প্রকাণ্ড একটা দীঘি। দীঘির ওপারে ফুটবল খেলার মাঠ, মাঠের পর থেকে ধানখেত শুরু হয়েছে। আকাশ অনেক দূরে যেখানে ধনুকের মতো পিঠ বাঁকিয়ে ঝুঁকে পড়েছে, ধানখেতটা ততদূর পর্যন্ত ছুটে গেছে। v
তিনি অবিভক্ত ভারতের পূর্ব বাংলার (অধুনা বাংলাদেশ) ঢাকা জেলায়, বিক্রমপুরের আটপাড়া গ্রামে ১১ ই সেপ্টেম্বর, ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহন করেন, স্বাধীনতার পর ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে চলে আসেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস 'পূর্ব পার্বতী' (১৯৫৭)। উপন্যাস রচনার জন্য তিনি সারা জীবন অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। 'সিন্ধুপারের পাখি'র জন্য ১৯৫৮ তে পেয়েছেন পুরস্কার, 'ক্রান্তিকাল' এর জন্য ২০০৩ এ অকাদেমি পুরস্কার। প্রফুল্ল রায় এর উদ্বাস্তু জীবনকেন্দ্রিক যে সমস্ত উপন্যাসগুলি রচিত সেগুলি হল ‘কেয়াপাতার নৌকা’ (২০০৩), ‘শতধারায় বয়ে যায়’ (২০০৮), ‘উত্তাল সময়ের ইতিকথা’ (২০১৪), ‘নোনা জল মিঠে মাটি’ (বাং ১৩৬৬)। ‘কেয়াপাতার নৌকা’, ‘শতধারায় বয়ে যায়’, ‘উত্তাল সময়ের ইতিকথা’ আকারে এবং নামে আলাদা হলেও আসলে তিনটি উপন্যাস মিলেই একটি উপন্যাস, ‘কেয়াপাতার নৌকো’র পরবর্তী খণ্ড ‘শতধারায় বয়ে যায়’ এবং তারও পরবর্তী খণ্ড ‘উত্তাল সময়ের ইতিকথা’। তিনটি উপন্যাসই আকারে মহাকাব্যিক। অসামান্য ক্ষমতা সম্পন্ন এইঔপন্যাসিক সারা জীবন জুড়ে পুরস্কারও পেয়েছেন প্রচুর। 'সিন্ধু পারের পাখি'র জন্য ১৯৮৫ তে 'বঙ্কিম পুরস্কার', 'ক্রান্তিকাল' উপন্যাসের জন্য ২০০৩ এ পেয়েছেন 'সাহিত্য অকাদেমি' পুরস্কার, এছাড়াও 'রামকুমার ভুয়ালকা', পাবলিশার্স এন্ড বুক সেলার্স গিল্ড এর 'লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট', 'শরৎস্মৃতি', 'বি কে জে এ' ইত্যাদি সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তার গল্প উপন্যাস অবলম্বনে রচিত হয়েছে ৪৫টির মতো টেলিফিল্ম, টেলি-ধারাবাহিক, ফিচার-ফিল্ম। 'মোহনার দিকে' অবলম্বনে 'মোহনার দিকে' (১৯৮৪), 'আদমি আউ আউরত' (১৯৮৪), 'একান্ত আপন'(১৯৮৭), 'চরাচর'(১৯৯৪), 'টার্গেট' (১৯৯৭),'মন্দ মেয়ের উপাখ্যান' (২০০৩), 'ক্রান্তিকাল'(২০০৫) ইত্যাদি উল্ল্যেখযোগ্য। 'মন্দ মেয়ের উপাখ্যান 'Best ASEAN film Award', 'Netpac Award', ও 'Golden Lotus Award'পায়। 'ক্রান্তিকাল' পায় 'Indian compitional Special Mention' পুরস্কার।