রাত এগারোটা বেজে গেলে রানি চোখ খুলে রাখতে পারে না। খালি খালি ঘুম পায় ওর। কিন্তু এই ব্যারাকবাড়িতে এত তাড়াতাড়ি রানিদের ঘুমোতে দেয় না কেউ। ঝলমলে ম্যাকসি বা কুর্তা-পাজামা বা বম্বের অভিনেত্রীদের মডেলে ড্রেস পরে বসে থাকতে হয়, থাকতেই হয়। তারপর খুলতে হয়। এতবার খুলতে হয়, এতদিন ধরে। কেন রানিদের এমন করে নগ্ন হতে হয় অনাদি-অনন্তকাল ধরে, তা রানি জানে না। কে জানে? উত্তর চব্বিশ পরগনার এ শহরটা কলকাতার খুব কাছে। আর এই ব্যারাকবাড়িটা শহরের এমন একটা জায়গায়, যেখানে ঢোকা যায়, বেরোনো যায় না। বাকি শহরটা যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন এ বাড়ি ভীষণ রকম জাগ্রত। পাঁচটা জায়গায় ভিডিও চলে সারা রাত। এই ব্যারাকবাড়িতে একটি চুল্লুর ঠেক, একটি ড্রাগের ঠেক আছে। আর আছে রানিরা। এ একটা সাম্রাজ্য, যা থেকে অনেক রাজস্ব ওঠে। এ সাম্রাজ্যের সম্রাট হল টাইগার। এখানে সম্রাট মরলে তার ছেলে সম্রাট হয় না। আরেকজন আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে, সে প্রাচীন সম্রাটের সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধ করে দখল নেয়। হাতকাটা দীনু এ সাম্রাজ্য গড়েছিল কংগ্রেস আমলে। দীনুর অনেক গল্প এখনও শোনা যায়। সে নাকি নেতাজী দিবসে বস্তির শিশুদের দিয়ে কুচকাওয়াজ করাতো। মোটর সাইকেল, অ্যামবাসাডর, সব থাকতেও সে সাইকেল রিকশায় ঘুরত। ব্যারাকবাড়ি তারই, মেয়েদের মালিকও সে। তবু ছবিকে ও ছেড়ে দিয়েছিল।
১৪ জানুয়ারি, ১৯২৬ সালে ব্রিটিশ ভারতের ঢাকা শহরে মহাশ্বেতা দেবী জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক ও মানবাধিকার আন্দোলনকর্মী।তাঁর বাবা মণীষ ঘটক ছিলেন কল্লোল সাহিত্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত খ্যাতনামা কবি ও ঔপন্যাসিক। তিনি ‘যুবনাশ্ব’ ছদ্মনামে লিখতেন। মণীষ ঘটকের ভাই ছিলেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক। মহাশ্বেতা দেবীর মা ধরিত্রী দেবীও ছিলেন লেখক ও সমাজকর্মী। তাঁর ভাইয়েরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে খ্যাতিমান ছিলেন। যেমন, শঙ্খ চৌধুরী ছিলেন বিশিষ্ট ভাস্কর এবং শচীন চৌধুরী ছিলেন দি ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি অফ ইন্ডিয়া পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক। মহাশ্বেতা দেবীর বিদ্যালয়-শিক্ষা শুরু হয়েছিল ঢাকা শহরেই। ভারত বিভাজনের পর তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। এরপর তিনি শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠভবনে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্য বিভাগে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হল হাজার চুরাশির মা, রুদালি, মার্ডারারের মা, বেহুলার বারোমাস্যা, দিয়া ও মেয়ে নামতা, স্বপ্ন দেখার অধিকার, প্রস্থানপর্ব, ব্যাধখণ্ড, অরণ্যের অধিকার ইত্যাদি। মহাশ্বেতা দেবী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ় রাজ্যের আদিবাসী উপজাতিগুলির (বিশেষত লোধা ও শবর উপজাতি) অধিকার ও ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করেছিলেন। তিনি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (বাংলায়), জ্ঞানপীঠ পুরস্কার ও র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার সহ একাধিক সাহিত্য পুরস্কার এবং ভারতের চতুর্থ ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান যথাক্রমে পদ্মশ্রী ও পদ্মবিভূষণ লাভ করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান বঙ্গবিভূষণে ভূষিত করেছিল। তিনি ২৮ জুলাই, ২০১৬ মৃত্যুবরণ করেন।