শেষ রাতে ঘুম ভেঙে গেল আনন্দীর। আকাশে তখনও আলো ফোটেনি ভালো করে। ঘরের জমাট বাঁধা অন্ধকারের গায়ে মাথায় কোরা কাপড়ের মতো একটু আবছা আলোর আঁচড় যেন। ঘুম ভেঙে কোনো পাখি ডেকে ওঠেনি এখনও। গাছের পাতা স্থির। কোথাও কোনা কাঁপন নেই। কী যে এক গুমোট চলছে কদিন ধরে। প্রকৃতি যেন স্তব্ধ হয়ে আছে। তার ওপর কাল রাতে ভালো ঘুম হয়নি। রাতভর ছেঁড়া ছেঁড়া স্বপ্ন। সেই কোন ছেলেবেলায় মামার বাড়ি বেড়াতে যাওয়া। তখন সেখানে ঘরে ঘরে টুসু উৎসব। মামাতো ভাই-বোনদের সঙ্গে শীতের সন্ধেয় টুসু গান শুনতে গিয়ে সারা রাত জেগে গান শুনে ভাসান দেখে ভোরবেলা বাড়ি ফেরা। এতদিন উজিয়ে সেই স্বপ্ন। ক'জন কিশোরী মেয়ে গোল হয়ে বসে টুসু সাজাচ্ছে। টুসু-র চারপাশ ফুলে ফুলে ভরা। টুসু ফসলের দেবী। টুসুর ভেলা উপচে পড়ছে ধানের তুষে। ভেলার মাঝখানটায় আর চারপাশে মাটির প্রদীপ জ্বলছে। প্রদীপগুলো গোল করে সাজানো। মাঝখানের প্রদীপটা বেশ বড়ো। দূর্বা, কড়ি, আলোচাল, সর্ষে, কাঁচাসবজি আর গাঁদা ফুল দিয়ে টুসু সাজানো চলছে। শীতের গাঢ় নীল রাত ক্রমশ ঘন হয়ে উঠছে। কলাপাতার ওপর হলুদরঙা মুড়ি, নারকেল, তিল আর নানারকম পিঠে পায়েসের নৈবেদ্য। মোমের নরম আলোয় জায়গাটা ছায়া ছায়া। মেয়ের দল টুসুকে ঘিরে গান গাইছে— আমার টুসুর লগন হইল দুই হাতে দুই সোনার বালা আমার টুসুর বর আইনতে কে কে যাবি আয় লো তরা।। আইসছে পথে জড়া মটোর একটায় বরযাত্রী ভরা একটাতে ভাই লতুন জামাই আই-এ বি-এ পাশ করা।। টুসু বলি গো তুমারে হইলদে মাইখে যাই-অ না বাইরে উলু উলু শঙ্খধ্বনি মটর থাইকে বর নামে।।