কোনো জাতিকে যদি বলা হয়-তোমরা বড় হও, তোমরা জাগ-তাতে ভালো কাজ হয় মনে হয় না। এক একটা মানুষ নিয়েই এক একটা জাতি। পল্লীর অজ্ঞাত-অবজ্ঞাত এক একটা মানুষের কথা ভাবতে হবে। মানুষকে শক্তিশালী, বড় ও উন্নত করে তোলার উপায় কী? তাকে যদি শুধু বলি-তুমি জাগো-আর কিছু না তাতে সে জাগবে না। এ উপদেশ বাণীর সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত আছে। এইটে ভালো করে বোঝা চাই। আবার বলি-কোনো জাতিকে যদি বাহির হতে বলি-বড় হও তাতে কাজ হবে না। মানুষকে এক একটা করেই ভাবতে হবে। একটা লোক জাতির সহানুভূতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে হাজার হাজার টাকা তুরস্কে পাঠিয়েছিলেন। তিনি যখন নগণ্য আর্ত মানুষের বেদনা কাহিনী গাইতে গাইতে ভিক্ষার ঝুলি স্কন্ধে নিয়ে পথে বের হতেন তখন প্রত্যেক মানুষের প্রাণ সহানুভূতি, বেদনা ও করুণায় ভরে উঠত। এই ব্যক্তি কিছুদিন পর তার এক নিরন্ন প্রতিবেশীর সর্বস্ব হরণ করতে দ্বিধাবোধ করেন নাই। মানুষের এই ভাবের জাগরণ ও বেদনা-বোধের বেশি মূল্য আছে বলে মনে হয় না। কোনো জাতির যখন পতন আরম্ভ হয়, তখন দেশসেবক যে কেউ থাকে না, তা নয়। স্বাধীনতার মমতায় কেউ প্রাণ দেয় না, তা বলি না-যারা দেয় তাদের মন ভিতরে ভিতরে অন্ধ হতে থাকে। জাতিকে খাঁটি রকমে বড় ও ত্যাগী করতে হলে সমাজের প্রত্যেক মানুষকে বড় ও ত্যাগী করতে হবে। কী উপায়ে?
জম্ম : ১৫ আষাঢ়, ১৩৫৭ বঙ্গাব্দ, ইংরেজি ১ জুলাই, ১৯৫০। পেশায় ইংরেজি বিষয়ের অধ্যাপক। সর্বশেষ কর্মস্থল বেগম রোকেয়া সরকারি কলেজ, রংপুর। প্রফেসর পদে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে চাকুরি থেকে অবসর নিয়েছেন। বাবা বেণীমাধব রুদ্র আর মা জীবনবালা রুদ্র দু’জনই প্রয়াত। এঁদের আদি নিবাস বৃহত্তর ঢাকার বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী গ্রামে। তবে তপন রুদ্রের আজম্ম বেড়ে ওঠা উত্তরবঙ্গের কুড়িগ্রাম জেলা শহরে। লেখাপড়া প্রথমত কুড়িগ্রাম রিভারভিউ হাইস্কুল, তারপর উচ্চমাধ্যমিক স্তরে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ এবং স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে পড়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্থায়ী নিবাস পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়া, কুড়িগ্রাম শহর। লেখালেখির প্রতি আগ্রহ ছাত্রজীবন থেকেই। স্কুল কলেজের বার্ষিকী, বিভিন্ন বছরে একুশে সংকলন এবং স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় তার লেখা কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ইত্যাদি ছাপা হতো। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য প্রচুর গীতিনক্শা লিখতেন একসময়ে। তবে অধ্যাপনা জীবনেই তিনি শুরু করেন মূল লেখালেখির কাজ। স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং সাময়িকীগুলোতে অসংখ্য লেখা প্রকাশ পেলেও পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ প্রকাশে এতদিন বলা যায় পিছিয়েই ছিলেন। তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘কবিতায় শ্রেণীঘাত’ একটি বহুমাত্রিক কাব্যগ্রন্থ, যেটি ঢাকায় প্রকাশ হয়েছে ফেব্র“য়ারি ২০০৭ এ। বইটি প্রকাশ করেছিল জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী, ঢাকা। লেখকের কাছে তাঁর ছাত্রছাত্রী, সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব, শুভাকাক্সক্ষী এবং সচেতন পাঠক সমাজের দীর্ঘদিনের দাবি তিনি যেন তাঁর লেখা সমস্ত প্রবন্ধ নিয়ে একাধিক বই প্রকাশ করেন। বর্তমান এই প্রবন্ধ সংকলনটি প্রকাশের মাধ্যমে সেই দাবি আংশিকভাবে পূরণ করতে যাচ্ছেন। শিক্ষিত পারিবারিক পরিম-লে গড়ে ওঠা লেখক তপন রুদ্র ছোটবেলাতে তাঁদের নিজ পরিবারকে একটি প্রতিষ্ঠানের আদলেই পেয়েছিলেন। বাবা-কাকারা ছিলেন সাম্রাজ্যবাদি বৃটিশ শাসন বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনের কর্মী, পেয়েছিলেন অত্যন্ত সচেতন স্বভাবের এক জননী। সঙ্গীত, নাটক, রাজনীতি ও খেলাধূলার মতো ক্ষেত্রগুলোতে বড় ভাইয়েরা সকলেই যার যার পছন্দের ক্ষেত্রে ছিলেন অত্যন্ত সপ্রতিভ ও সক্রিয়। স্বল্পভাষী স্বভাব সম্পন্ন হলেও লেখক অত্যন্ত সংগঠন প্রিয়। ছাত্ররাজনীতির সাথে সংশিষ্টতা ছিল গভীর। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের বিভিন্ন ইউনিটে কাজ করেছেন এবং বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্বে দিয়েছেন। ছাত্রজীবন শেষে সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সংশিষ্ট হন। তিনি নয় বছরেরও বেশি সময় উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সংসদের সহ সভাপতি ছিলেন। কবি বা লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার ব্যবসায়িক মনোভাবে তিনি আস্থা রাখেন না। শখ ও খেয়াল নয় বরং ঐতিহ্য, সমাজবাস্তবতা, জাগতিক ঘটনাচক্র এবং মনস্তাত্ত্বিক বৈচিত্র বিশেষণ ইত্যাদি সার্বজনীন বিষয়গুলোর উপরও আলোকপাত করাকেই বড় দায়িত্ব মনে করে থাকেন। বিকাশমুখী মানব সমাজের বিন্যস্ত ভাব-প্রবণতা, সত্য উপলব্ধির নানা স্তর ও জিজ্ঞাসাগুলোকে আঙ্গিক দান করার দায়িত্ব নেয়াকে জীবনের ব্রত মনে করেন। সেই কারণে পেয়েছেন অসংখ্য গুণগ্রাহী, বন্ধু ও শুভাকাঙ্খী যাঁদের ভালোবাসা, সাহচর্য ও সহযোগিতা নিয়েই তিনি চলতে চান সারাজীবন।