ভূমিকা কাফকার মেটামরফসিস্ ঠিক কত বয়সে কোন সময় (ইংরেজিতে) পড়েছিলাম মনে নেই। সে এক বিপর্যয়কর অনুভূতি। পড়ার পর মনে হয়েছিল গল্পটি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সাহিত্যের যেমন হওয়া উচিত তাই। গ্রেগর সামসার রূপান্তর আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে চলেছে বহু বহু বছর। গল্পটির দুর্বোধ্য আকর্ষণ আমাকে বিপন্নতায় আজও একইভাবে উদ্বিগ্ন করে। সমষ্টি থেকে ব্যক্তির বিচ্ছিন্নতা পােকার দেহের ভিতরে মানুষের সজাগ মগজের আতঙ্ককর অস্তিত্ত্ব, ক্রমান্বয়ে অমানবিকতায় ঘুরপাক, অবশেষে মৃত্যু নিয়ে আসে যদিও জীবন বয়ে চলে একইভাবে। বাস্তব-অবাস্তবের আলােঅন্ধকার কাফকার নিপুণ হাতে বিশ্বাসযােগ্যতায় উত্তীর্ণ হয়ে আমাদের রুদ্ধশ্বাস করে টেনে নিয়ে যায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। কিন্তু গল্প তাে গল্পই। যার লেখক আবার কাফকা। এই গল্পের নাট্যরূপ দেওয়ার দুর্বুদ্ধি কেন আমাকে পেয়ে বসল জানি না। তাকে এদেশের জল হাওয়া মাটিতে টেনে আনার চেষ্টার পেছনে কী ছিল? মনে হয় গ্রেগর সামসার বিপন্নতাই এ জন্য দায়ি। যার কোন দেশকাল নেই। সে অসুখ সর্বত্রগামী। নাটকের কাহিনীতে মূল গল্পের কাছে আনুগত্য বজায় রেখেছি। চরিত্রায়ন সংলাপ সংঘাত সব উপাদানই যথাসম্ভব খুঁজেছি মূল থেকেই। এই নাটক কাফকার মনােজগতের নির্যাসকে ধরতে পেরেছে কিনা তার বিচারভার পাঠক ও দর্শকদের ওপর। বৃটিশের ইউনিয়ন জ্যাক সরে গিয়ে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকা অর্ধ শতাব্দী ধরে উড়ছে দেশের মাটিতে। আর এক নতুন শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে এসে আমরা পিছন ফিরে হিসেব করছি এই ফেলে আসা পঞ্চাশটি বছর। স্বাধীনতা! আহা প্রিয় স্বাধীনতা। কী আমাদের প্রত্যাশা, কী আমাদের প্রাপ্তি। এই স্বাধীনতার জন্য যারা জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টিকে বেছে নিয়েছিলেন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষতে তারা একে একে বয়সের ভারে সরে যাচ্ছেন পাদপ্রদীপের আলাে থেকে। কী সঞ্চয় নিয়ে যাচ্ছেন তারা, কী রেখে যাচ্ছেন। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে? বিশ্বাসের আত্মত্যাগের দেশপ্রেমের কোনাে পরম্পরা আমরা অনুভব করছি কি? নতুন প্রজন্ম কী ভাবছেন ওঁদের স্বাধীনতা যুদ্ধের পিতা-পিতামহদের? কেমন স্বাধীনতা পেয়েছি আমরা? দেশের বুকে গভীর ক্ষত মহামারীর মত আমাদের অকস্মাৎ অনিশ্চয়তার আশংকায় আতঙ্কিত বিমূঢ় করে দেয়। এই দুর্যোগের শিকড় কোথায়? জীবন তবুও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেই। আমরা তাে বিশ্বাসী হতে চাই।