আমরা এখন ১৯১৭-এর অক্টোবর বিপ্লবের প্রস্তুতিতে লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক পার্টি কীভাবে সামনে এগিয়েছিল সেসব জানার চেষ্টা করব। লেনিনের নির্বাচিত রচনাসংগ্রহ ১-এর (শ্রাবণ প্রকাশনী) ভূমিকায় আলোচিত ঘটনাক্রমের ধারাবাহিকতায় আমরা এখন এই আলোচনাকে সামনে এগিয়ে নেব। জুলাই-আগস্টের তীব্র শ্রেণী-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জনগণের রাজনৈতিক চেতনায় মৌলিক পরিবর্তন ঘটে গিয়েছিল। এর সাথে কার্নিলভ প্রতিবিপ্লবী বিদ্রোহ দমনের পর সশস্ত্র শ্রমিক, সৈনিক ও মেহনতী মানুষের অস্থায়ী বুর্জোয়া সরকারের প্রতি কোন আস্থাই আর রইলো না। লেনিনের প্রতিদিনকার লেখা, বক্তব্য-বিবৃতি ও আলাপ-আলোচনার সাথে সংগতি রেখে বলশেভিক পার্টির নিরন্তর কর্মকাণ্ডের ভেতর দিয়ে জনগণের মধ্যে এই প্রত্যাশা জাগানো সম্ভব হয়েছিল যে একমাত্র বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে সোভিয়েতসমূহের কর্তৃত্বাধীনে রাশিয়াকে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ঘোষণা, জমিতে ব্যক্তিগত মালিকানা বিলোপ, উৎপাদন ও বণ্টনের উপর শ্রমিকের নিয়ন্ত্রণ প্রবর্তন এবং অবিলম্বে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়ে শান্তি সুনিশ্চিত করা সম্ভব। অন্যদিকে সো. রে., মেনশেভিক এবং অন্যান্য পেটি বুর্জোয়া ও বুর্জোয়া পার্টির প্রচার-প্রচারণা ও কর্মকাণ্ডের ভেতর দিয়ে একমাত্র অস্থায়ী বুর্জোয়া সরকারের পক্ষে এসব দাবি পূরণ করা সম্ভব, এমন বার্তাই জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সংকট দ্রুতই এত পরিপক্ক হয়ে উঠেছিল যে বুর্জোয়া সরকার থেকে জনগণের মোহমুক্তি ঘটে যায়। একমাত্র বলশেভিক পার্টিই দেশকে এই দুর্যোগ থেকে উদ্ধার করতে পারে এবং জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে এই বিশ্বাসই শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বুর্জোয়াদের সাথে আপোসকামী ভূমিকার কারণে সো. রে. পার্টিই কেবল নয় মেনশেভিক পার্টির ভেতরকার ‘বামপন্থী’ গোষ্ঠীও পার্টির সাথে তীব্র আন্তঃদ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে, এভাবে বুর্জোয়া ক্ষমতা এবং তাদের সমর্থক পেটি বুর্জোয়া পার্টিগুলির সংকট এক অতুলনীয় পরিস্থিতিতে পৌঁছে গিয়েছিল, আর এটা ছিল তাদের আপোসকামী মনোভাবের চরম প্রকাশ। অন্যদিকে শ্রমিক ও সৈনিকরা আপোসহীনভাবে বুর্জোয়াশাসনের বিলুপ্তি চাচ্ছিল, তারা চাচ্ছিল শ্রমজীবী জনগণের ক্ষমতার প্রতিষ্ঠা- সোভিয়েতসমূহ হবে যার প্রতিভূ। এই সময়ে প্রধান প্রধান শিল্পাঞ্চলগুলিতে বুর্জোয়াশ্রেণীর বিরুদ্ধে প্রলেতারীয় শক্তির এবং গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের দরিদ্রতম অংশগুলির অংশগ্রহণে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের উপযোগী পরিস্থিতি দ্রুততার সাথে শক্তিশালী হয়ে উঠছিল।