মানব ইতিহাসে অক্টোবর বিপ্লবের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আর সংঘটিত হয়নি। ১৯১৭-এর ২৫ অক্টোবর রাশিয়ায় এই বিপ্লব সংঘটিত হয়, সভ্যতার ইতিহাসে যা ছিল এক অনন্য ঘটনা, অনন্য এজন্য যে এটা ছিল নতুন ধরনের এক রাষ্ট্র, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্পূর্ণ নতুন এক সংগ্রাম, যার চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল এক শোষণহীন সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা। ইতিপূর্বে সকল বিপ্লবে এক শাসক শ্রেণীর হাত থেকে আরেক শাসক শ্রেণীর হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা এসেছে, কিন্তু শোষণের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। সেই বিচারে এই বিপ্লব ছিল সম্পূর্ণ নতুন বিপ্লব। এটা ছিল এমন এক পরিবর্তন, যা ইতিপূর্বেকার সকল পরিবর্তনকে অতিক্রম করেছে, সমাজের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যা এই বিপ্লবের অভিঘাতে পরিবর্তিত হয়নি। ইতিহাসে এই প্রথম সমাজের নিচুতলার হত-দরিদ্র শ্রমিক, গরিব কৃষক আর সৈনিক, অর্থাৎ মেহনতী মানুষ সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করল। এভাবে রাশিয়া জাতীয় বিপর্যয় আর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পায়। এই বিপ্লব নিয়ে সকল লেখা একজীবনেও শেষ করা সম্ভব নয়, কারণ শত্র“-মিত্র সকলেই তো লিখেছে, শত্র“রা বরং বেশিই লিখেছে, যারা এতদিন জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সম্পদের একচ্ছত্র অধিপতি থেকে রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করেছে, এই বিপ্লব তাদেরকেই ক্ষমতাচ্যুত করেছিল, বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল, তাই তাদেরকেই এই মহাবিপ্লব নিয়ে বেশি লিখতে হয়েছে। অক্টোবর বিপ্লবের মূল লক্ষ্য ছিল এক সর্বব্যাপক গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। রাষ্ট্রের সকল স্তরে সাধারণ তৃণমূল মানুষের ভোটে নির্বাচিতদের হাতে থাকবে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা। প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সকল ক্ষেত্রে প্রতিনিধি নির্বাচনের পদ্ধতি অনুসরণ করা এই বিপ্লব বাধ্যতামূলক করেছিল, নিজ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারণের দায়িত্ব যেসব প্রতিনিধিদের হাতে থাকবে। গণতন্ত্র ও মানবতা বিকাশের ইতিহাসে এটা এক যুগান্তকারী ঘটনা। দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এই বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছিল। বিপ্লব কয়েকজন অতি অগ্রসর ও আত্মত্যাগী মানুষের কাজ নয়, দেশের বিপুল অধিকাংশ মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই কেবলমাত্র একটা বিপ্লব সফল হতে পারে, অক্টোবর বিপ্লবও এর ব্যতিক্রম নয়। অক্টোবর বিপ্লবের মর্মকথা এরই আলোকে, এই বিপ্লবের মহান নেতা লেনিন তার লেখায় তুলে ধরেছেন। সেসব লেখা নিয়েই ‘নির্বাচিত রচনাসংগ্রহ ১’ প্রকাশিত হলো।