ভূমিকা স্ত্রশিক্ষাবিধায়ক বইটির পরিচয় দেওয়ার সময়ে সমাচার দর্পণে (১৩ এপ্রিল ১৮২২) বলা হয়েছে, ইদানীন্তন বিদ্যাবতী অনেক স্থানে অনেক স্ত্রী আছেন এই কলিকাতা মহানগরের মধ্যে ভাগ্যবান লােকেরদিগের অনেক স্ত্রী প্রায় লেখাপড়া জানেন। তবে দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রাচীন ভারতবর্ষে বিদ্যাবতী নারীর তালিকা দেওয়া হয়েছে। যাজ্ঞবন্ধ্যের স্ত্রী মৈত্রেয়ী, অত্রির স্ত্রী অনসূয়া, দ্রুপদরাজকন্যা পাণ্ডবপত্নী, শ্রীকৃষ্ণ-পত্নী রুক্মিণী, চিত্রলেখা, লীলাবতী, কর্ণাটদেশের রাজরানী, লক্ষ্মণসেনের স্ত্রী থেকে শুরু করে বীরসিংহ রাজার কন্যা বিদ্যা, মহারানী ভবানী, হটী বিদ্যালঙ্কার, শ্যামাসুন্দরী—এই দীর্ঘ তালিকার সাহায্যে প্রতিপাদিত হয়েছে, এতদ্দেশীয় স্ত্রীগণেরা ইদানী বিদ্যাভ্যাস করেন না। কিন্তু বিদ্যাভ্যাসকরণে দোষ লেশও নাই। যদ্যপি শাস্ত্রীয় ও ব্যবহারিক দোষ থাকিত, তবে পূর্বতন সাধ্বী স্ত্রীগণেরা বিদ্যাশিক্ষাতে অবশ্য পরাজুখ হইতেন।' (সমাচার দর্পণ, ৬ এপ্রিল ১৮২২)। কিন্তু উনিশ শতকে অনেকদিন পর্যন্ত মেয়েদের মধ্যে লেখাপড়ার তেমন প্রচলন ছিল না। মিশনারিদের প্রচেষ্টায় যে-সব স্কুল স্থাপিত হয়েছে, সেখানেও সম্রান্ত ঘরের মেয়েরা দলে দলে পড়তে যায়নি। বেথুন সাহেবের স্কুল প্রতিষ্ঠার আগে এই অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন ঘটেনি। অবশ্য পূর্বকালে স্ত্রীলােকেরা কেবল পাঠকরণে সুশিক্ষিত হইত তাহা নয় কিন্তু তাহারা সংস্কৃত ভাষায় এমত পুস্তক লিখিয়া গিয়াছে যে অদ্যাপিও বিজ্ঞ লােকেরদের মধ্যে তাহার প্রশংসা আছে।' (সমাচার দর্পণ, ২১ নভেম্বর : ১৮২৯)। মধ্যযুগে বাংলাসাহিত্যে মহিলা-কবির সংখ্যা অল্প। অন্তত এখনও পর্যন্ত খুব বেশি মহিলা কবির সন্ধান মেলেনি। মনে হতে পারে স্কুলে শিক্ষালাভের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েরা কবিতা লিখতে শুরু করেছেন, তা যদিও সত্য নয়। তবে এই সময় থেকে মেয়েদের কবিতা রচনার একটা ধারাবাহিক ইতিহাস পাওয়া যাচ্ছে। সংবাদ প্রভাকরে (২৬ জানুয়ারি ১৮৫৬) সম্ভবত সম্পাদক ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ‘বেথিউনি সাহেবের উদ্যোগে ‘বিক্টরিয়া বাঙ্গালা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সংবাদ দিয়ে লেখেন, “কামিনীরা পুরুষের অপেক্ষা কোন অংশে ন্ন নহে, বরং স্থিরতা ও ধৈর্য প্রভৃতি গুণে শ্ৰেষ্ঠা হইতে পারে। অতএব তাহারা বিদ্যাশালিনী হইলে সাংসারিক লােকযাত্রা নির্বাহ সূত্রে অতিশয় মঙ্গল হইবেক, পুরুষেরা সর্বদা সুনীতির বক্সে ভ্রমণ করিতে পারিবেন, তাহারদিগের স্বাভাবিক যে শক্তি আছে বিদ্যার অভাব জন্য তাহার স্ফুর্তি হইতে পারে না, চালনা হইলে ঐ শক্তি যে কত উজ্জ্বলা হয় তাহা বলা যায় না, পাঠকবর্গের স্মরণ আছে, আমরা ১০ বৈশাখ শনৈশ্চর বাসরীয় প্রভাকরে “দৈবশক্তি’ শিরােভূষণ প্রদান পূর্বক নবম বর্ষীয়া এক হিন্দু বালিকার বিরচিত কয়েকটি কবিতা প্রকটন করিয়াছিলাম।