ভূমিকা রবীন্দ্রচর্চা বাঙালির, বিশেষ করে শিক্ষিত বাঙালির জীবনচর্চা। আমাদের বস্তুজীবন না হোক্ অন্তত মনোজীবন রবীন্দ্রসংস্কৃতির কমবেশি সান্নিধ্য ছাড়া চলতে পারে না। রবীন্দ্রনাথকে পেরিয়ে যেতে হলেও তাঁকে স্বীকার করে নিয়েই অতিক্রম করতে হয়। তাই বাঙালির সাংস্কৃতিক কর্মিষ্ঠতা আজ অনেকাংশে রবীন্দ্রচর্চা, তার মননচর্চা অল্পবিস্তর রবীন্দ্র-অধ্যয়ন। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আমারও আগ্রহ অনেক দিনের। কৌতূহলে আক্রান্ত হয়ে এ যাবৎ রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে অনেক অনুসন্ধান চালিয়েছি। তার ফল বেশ কিছু প্রবন্ধ। তবে তাদের অধিকাংশই তাঁর কাব্য-ভাবনা সম্বন্ধে, তাঁর কাব্যকলা সম্বন্ধে। রবীন্দ্রনাথের কাব্যকলা সম্পর্কিত প্রবন্ধগুলিই এখানে সংকলিত হলো। প্রবন্ধগুলি নানা সময়ে লেখা, নানা উপলক্ষে লেখা, নানা জনের তাগিদে লেখা। কোনো সযত্নরচিত পরিকল্পনা নিয়ে কোনো বিশেষ সময়ে প্রবন্ধগুলি লিখিত হয় নি। ফলে এদের মধ্যে মেজাজের একরূপতা নেই, রীতিপদ্ধতির পার্থক্য আছে। বিভিন্ন কালপর্বে রচিত প্রবন্ধগুলির ভাষাভঙ্গিও সর্বত্র এক হয়ে ওঠেনি। সবচেয়ে বড়ো কথা, প্রায় কোনো প্রবন্ধেরই বিষয়বস্তু সমগ্র রবীন্দ্রকাব্য নয়। যেখানে যে পর্বকে প্রাসঙ্গিক মনে করেছি, সেই পর্বটি অবলম্বন করেই রবীন্দ্রকাব্যকলার পরিমাপ করার চেষ্টা করেছি। ভাষা সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ ভবিষ্যতে সংযোজন করার ইচ্ছা রইলো। প্রবন্ধগুলি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভঙ্গিতে লেখা হলেও তাদের মাধ্যমে সমগ্রভাবে রবীন্দ্রকাব্যের শিল্পরীতি সম্পর্কে পাঠকের আগ্রহ জাগলে খুশি হব। এই সংকলনের অন্তর্ভুক্ত প্রবন্ধগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটির রচনার পেছনে ছিলো সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শ্রীমতী ঠাকুরের প্রীতিস্নিগ্ধ তাড়না। এদের মধ্যে চারটি ‘রবীন্দ্র-প্রসঙ্গ' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো। আমি এখানে ঠাকুরদম্পতির কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। দুটি প্রবন্ধ লেখা হয়েছিলো আমার ছাত্র ডাঃ সত্যনারায়ণ দাসের উৎসাহে—সেগুলি প্রকাশিত হয়েছিলো বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ‘সাহিত্য' পত্রিকায়। শ্ৰীমান্ সত্যনারায়ণকে স্নেহাশিস্ জানাচ্ছি।