রবীন্দ্রকবিতালোক-এর প্রথম খণ্ডটি যাঁদের চোখে পড়েছে, তাঁরা দেখেছেন, সন্ধ্যা-সঙ্গীত থেকে শেষ লেখা পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের সমগ্র কবিতালোকের পরিচয়-গ্রহণ আর স্বরূপ- সন্ধানের অভিপ্রায়ই কয়েকটি খন্ডে সমাপ্য একটি অপেক্ষাকৃত বৃহদায়তন গ্রন্থরচনার প্রেরণা। রবীন্দ্রকবিতালোক পন্ডিত বা পন্ডিতম্মন্যদের জন্য পরিকল্পিত নয়। পরীক্ষাসাগর উত্তরণ- প্রয়াসীদের সন্তরণপটুত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে রচিত ছদ্মবেশী বোধিনী পুস্তকও নয়। রবীন্দ্রানুরাগী পাঠকসাধারণের রবীন্দ্রকবিতাপাঠে সহায়ক ভূমিকা গ্রহণেই লেখকের চরিতার্থতা। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় যা' নেই তা' খুঁজে বের করা বা চাপিয়ে দেওয়ার পন্ডশ্রমের চেয়ে কী আছে, তারই সন্ধানে যাত্রা এখানে। নির্বাচিত কবিতার বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত পাঠ তো নয়ই, কবিতাবইগুলির বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত পাঠও নয়, এমনকী রবীন্দ্রনাথের সমগ্র কবিতাপাঠও কোনো বিশল্যকরণী নয়, সমগ্র রবীন্দ্রজীবন ও সাহিত্যশিল্পের পরিপ্রেক্ষণীতেই রবীন্দ্রকবিতার পাঠ কবির অভিপ্রায়কে যদি-বা স্পর্শ করতে পারে। ‘রবীন্দ্রকবিতালোক' প্রথম খন্ডের প্রথম ভাগটিতে আছে ‘কবিতাপাঠের ভূমিকা', দ্বিতীয় ভাগে ‘নির্বাচিত কবিতাপাঠ', তৃতীয় অংশটি ‘নির্দেশিকা’। ‘কবিতাপাঠের ভূমিকা' অংশটি শুধু প্রথম খন্ডেরই ভূমিকা নয়, সমগ্র গ্রন্থটির ভূমিকারূপেও দেখা যায়। দ্বিতীয় খন্ডের ‘কবিতাপাঠের ভূমিকা’-ও একই ভাবে দ্বিতীয় খন্ডের কবিতাপাঠের প্রস্তাবনারূপে তো বটেই, আবার সমগ্র গ্রন্থের দিক থেকেও বিবেচ্য। প্রথম খন্ডের নির্বাচিত কবিতাগুলি সন্ধ্যা- সঙ্গীত থেকে মানসী পর্যন্ত কাব্যপর্যায় সূত্রে গৃহীত। দ্বিতীয় খন্ডে মানসী পরবর্তী সোনার তরী-র কবিতাবলিই আমাদের আলোচনা অন্তর্গত। ‘সোনার তরী-চিত্রা'র প্রেক্ষিত, প্রবণতা, ফল-পরিণাম তথা ভাবনালোক অবশ্য স্বরূপত অভিন্ন। তার আভাস এই দ্বিতীয় খন্ডেই পাওয়া যাবে।