"রবীন্দ্রসংস্কৃতির ভারতীয় রূপ ও উৎস" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: সহস্রগুণমুৎস্রষ্টমাদত্তে হি রসং. রবিঃ (কালিদাস) রঘুরাজদের এই প্রশস্তিটি বাংলার রবিকবির পক্ষেও অনায়াসে প্রযােজ্য। বেদ-উপনিষদ, রামায়ণ-মহাভারতগীতা-পুরাণ থেকে শুরু করে কালিদাসজয়দেব প্রমুখ কবিদের কাব্য, তথা বুদ্ধের এবং মধ্যযুগের সন্তসাধকদের বাণী এবং বৈষ্ণব পদাবলী ও বাউল গানের সুবিপুল সাহিত্য-ভাণ্ডারে বিস্তৃত ভারতসংস্কৃতিকে আত্মস্থ করে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ তাঁর সারাজীবনের কাব্যে ও সাহিত্যে কিভাবে পরিবেশন করেছেন, এই গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের ১৮টি অধ্যায়ে তার সতথ্য বিবরণ আছে। দ্বিতীয় খণ্ডটি হল উপাদান-সংগ্রহ বিভাগ—এখানে বিভিন্ন সংস্কৃত শাস্ত্রগ্রন্থ ও তৎপরবর্তী যুগের বিভিন্ন ও বিচিত্র ভারতীয় সাহিত্যের যেসব উপাদান বা উদ্ধৃতি রবীন্দ্রসাহিত্যে স্থান পেয়েছে তাদের উৎস নির্দেশ ও যথাসম্ভব কালানুক্রমিক তালিকা সংকলিত। এই তালিকার ভিত্তিতেই রবীন্দ্রমননে ভারতসংস্কৃতির বিভিন্ন পর্বের প্রভাব ও সেই বিষয়ের ব্যাখ্যা বা সেই উপাদান অবলম্বন করে রবীন্দ্ররচনাসম্ভারের আলােচনা প্রথম খণ্ডের উপজীব্য। গ্রন্থ সম্বন্ধে দুই গুণিজনের অভিমতের নমুনা : | রবীন্দ্রগবেষণার অন্যতম আদর্শ ও আকরগ্রন্থ রূপে (এই গ্রন্থ) ভাবী গবেষকদের পথনির্দেশ করবে।
প্রেসিডেন্সী কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের উজ্জ্বল নক্ষত্র Pompa Mojumdar ১৯৬১ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আচার্য প্রবোধচন্দ্র সেনের তত্ত্বাবধানে রবীন্দ্রসাহিত্যে ভারতসংস্কৃতির প্রভাব ও উপাদান নিয়ে এক নিবিড় তথা দিক-নির্দেশক গবেষণায় নিযুক্ত ছিলেন। বর্তমান গ্রন্থ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পি. এইচ. ডি. ডিগ্রী-দুই-ই এই সুদীর্ঘ গবেষণার ফসল। ১৯৮০ সাল থেকে ২০০৪ সালে অকাল প্রয়াণ পর্যন্ত তিনি অনন্য কৃতিত্বের সঙ্গে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও রবীন্দ্র সাহিত্যে গবেষণায় রত ছিলেন। সুবক্তা এবং দরদী অধ্যাপিকা হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের কাছে তার অসাধারণ সুনাম ও জনপ্রিয়তা ছিল। তার মধুর স্বভাব ও অমায়িক ব্যবহারে সহকর্মীদের আন্তরিক প্রীতি সহজেই অর্জন করেছিলেন। শেষজীবনে ‘প্রমথনাথ বিশীর সংক্ষিপ্ত জীবনী (বাংলা একাডেমী ২০০২) ছাড়া আর কোনো স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনার অবকাশ না পেলেও রবীন্দ্রসাহিত্য ও অন্যান্য বিষয়ে লেখা তার বহু প্রবন্ধ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।