স্ত্রীলোক ও পুরুষ এই পরিবর্তনশীল ঊনবিংশ শতাব্দীতে পুরাতন প্রথা ও আচার ব্যবহার সকল যেমন দ্রুতবেগে এক দিক দিয়া বিলোপ পাইতেছে সেইরূপ নানা প্রকার নূতন রীতি নীতি অন্য দিক দিয়া সকল সভ্য দেশেরই সমাজ ও কাজকর্ম্মে প্রবিষ্ট হইতেছে। কিন্তু শিক্ষিত ও মার্জিত লোকদের মধ্যে সংসারে স্ত্রীলোকের পদ ও স্ত্রীপুরুষ জাতির পরস্পর সম্বন্ধ লইয়া যে মহা আন্দোলন, তাহাতে মানব সমাজের মূলে যেরূপ ঘাত প্রতিঘাত চলিতেছে এরূপ অন্য কিছুতে নহে। ঐ উভয়জাতির সম্বন্ধ স্বভাবের দ্বারা স্থিরীকৃত হইয়াছে, এই ভাবিয়া বহুদিন ধরিয়া লোকে নিশ্চিন্ত রহিয়াছিল, ও ঐ সব গুরু বিষয়ে হস্তক্ষেপ করিতে বা উহা লইয়া তর্কবিতর্ক করিতেও সাহস পাইত না। কিন্তু কয়েক বৎসর হইল, অন্যান্য পুরাতন রীতিনীতির ন্যায় উক্ত বিষয় লইয়াও এখন সকলেই নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে তর্ক করিতে প্রস্তুত। সংসারে নারীজাতির পদ ও অধিকার লইয়া সমস্ত সভ্য জগতে এক মহা আলোড়ন উঠিয়াছে। আর ঐ আলোড়ন প্রভাবেই সর্বত্র স্ত্রীশিক্ষার উন্নতির নানা উপায় খোলা হইয়াছে। অনেক দেশে নারীরা ডাক্তার, কেরাণী ইত্যাদি পদে প্রবেশ করিবার অধিকার পাইয়াছে, এবং বিবাহ ও স্ত্রী সম্বন্ধীয় আইনেরও সংশোধন ঘটিয়াছে। আর আমাদের ভারতবর্ষেও যে নূতন স্ত্রীজীবনের সঞ্চার, তাহাও ঐ মহা আন্দোলনেরই ফল। ইহা হইতে দেখা যাইতেছে সমগ্র জগতে নারীজাতির অবস্থা পূর্ব্বাপেক্ষা অনেক অধিক উন্নত হইয়াছে।