"উপন্যাস সমগ্র (১ম ও ২য় খণ্ড একত্রে)" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: সন্তোষকুমার ঘােষ, হয়তােবা নিজেই আড়াল করে ফেলেছেন তার সাহিত্যিক-পরিচিতি। অথচ সাহিত্যে আবির্ভাবলগ্ন থেকেই তার লেখনী স্বাতন্ত্রচিহ্নিত। কালের কুটিল রেখাগুলি তিনি চেনাতে তৎপর, তবে তাঁর ভঙ্গি বঙ্কিম নয়। বরং শিল্পীর দরদে আর্দ্র তার কলম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমকাল ও তার পরবর্তী সময়পর্বের কলকাতা-কেন্দ্রিক মধ্যবিত্তের। জীবন-দলিল কিনু গােয়ালার গলি’ ও “সুধার শহর’- এই উপন্যাস দুটি। নানারঙের দিন’-এ আত্মজীবন অবলম্বন হলেও বৃহত্তর ক্যানভাসে ধরা পড়ল পরাধীন দেশের জাতীয় আন্দোলন। ‘মুখের রেখা’ থেকে আত্মজৈবনিক উন্মােচন এল অন্যভাবে; তারপর ‘জল দাও’, ‘স্বয়ং নায়ক’, ‘শেষ নমস্কার শ্রীচরণেষু মাকে’ – একের পর এক উপন্যাসে নানাখানা করে নিজেকে উপস্থাপিত করে, সমাজ সংকটের ঝুটি ধরে নাড়া দিয়েছেন তিনি। নিয়ত নতুন রীতির অক্লান্ত সন্ধানী সন্তোষকুমার মধ্যম পুরুষের জবানিতে লিখেছেন ‘রেণু, তােমার মন’, আবার উত্তাল সত্তরের। উত্তাপ ধরা পড়েছে ‘সময়, আমার সময় উপন্যাসে। গণনায় তার উপন্যাস-সংখ্যা কম। কিন্তু শিল্প-বিচারে সেগুলি যে এক অননুকরণীয় শৈলী ও আশ্চর্য প্রাণাবেগকে ধারণ করে আছে—রসিক পাঠকমাত্রেই তা উপলব্ধি করবেন। দু’খণ্ডে প্রকাশিত হল এই লেখকের উপন্যাস সমগ্র। এই দ্বিতীয় খণ্ডে থাকছে ‘ফুলের নামে নাম’, ‘শেষ নমস্কার শ্রীচরণেষু মাকে’, ‘সময়, আমার সময়’, ‘ফুল নদী পাখি’, ‘মানুষ কিন্তু জন্তু, “নিশীথ রাতে’, ‘আমরা যাই না’, ‘এই রাত্রি আমার’, ‘একটি উপন্যাসের উপক্রম। কয়েকটি খসড়া’, ‘সেই পাখি।
সন্তোষকুমার ঘোষ (জন্ম: ৯ সেপ্টেম্বর ১৯২০ - মৃত্যু: ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫) একজন বিখ্যাত সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। সন্তোষকুমার ঘোষ বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুরের রাজবাড়ীর বাসিন্দা ছিলেন। তিনি ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে বিএ পাস করেন। কবিতা দিয়ে তাঁর সাহিত্য রচনার শুরু হয় । তাঁর প্রথম উপন্যাস নানা রঙের দিন থেকেই তাঁর মধ্যে এক নতুন রচনাশৈলির পরিচয় পাওয়া যায় । কিনু গোয়ালার গলি তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস । তাঁর আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস শেষ নমস্কার - শ্রীচরণেষু মাকে । এই গ্রন্থটি ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করে। কয়েক দশক ধরে তিনি নিজস্ব ভঙ্গিতে বহু ছোটগল্প লিখেছেন । তাঁর অন্যান্য বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জল দাও, সময় আমার সময় প্রভৃতি। তাঁর সাংবাদিক জীবনের শুরু ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে যুগান্তর পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসাবে। এরপর বাংলা ও ইংরেজি আরও কয়েকটি পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকার বার্তা-সম্পাদক হিসাবে যোগ দিয়ে বাংলা সাংবাদিকতায় নতুনত্ব আনেন। পরবর্তীকালে তিনি এই পত্রিকার সংযুক্ত সম্পাদক হন। তিনি অনেক সাংবাদিকও গড়ে তুলেছিলেন। সন্তোষকুমার ঘোষ একজন রবীন্দ্র অনুরাগী ছিলেন ।