"কবিতাসমগ্র" বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের উত্তাল কালপর্বে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর আত্মপ্রকাশ। তারুণ্যশাসিত এই কবি একাধারে দ্রোহ ও প্রেম, স্বপ্ন ও সংগ্রামের নিবিষ্ট সাধক। মাটি, মানুষ ও ঐতিহ্যের প্রতি আমৃত্যু দায়বােধ তার কাব্যকে দিয়েছে মৃত্তিকালগ্ন ও শিকড়স্পর্শী চারিত্র্য। নিজেকে ‘শব্দ-শ্রমিক’ উল্লেখ করে তিনি কাঁধে তুলে নিয়েছেন সাম্যবাদী সমাজ-নির্মাণের নিষ্ঠা। তাই তার কবিতায় সকল অসাম্য, শােষণ, নিপীড়ন, স্বৈরাচার, সাম্প্রদায়িকতা ও নব্য-ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে বারবার ঝলসে উঠেছে অগ্নিক্ষরা প্রতিবাদ। পাশাপাশি, প্রেমের কবিতায় আর্দ্রস্বরে তিনি মেলে ধরেছেন মগ্ন চৈতন্যের বর্ণিল ভুবন। লক্ষণীয় যে, উদ্দীপনা-উন্মুখ ও সামষ্টিক চেতনার সমস্বরী হয়েও রুদ্রের কবিতা শৈল্পিক অঙ্গীকার থেকে বিচ্যুত হয়নি। জীবন ও শিল্পের, প্রতিবাদী চৈতন্য ও কাব্য-নিরীক্ষার এই নির্বিরােধ মেলবন্ধনই রুদ্রের কবিতার মৌল শক্তি- যা তার বিপুল পাঠকপ্রিয়তারও কুললক্ষণ। মাত্র পঁয়ত্রিশ বছরের স্বল্পায়ু জীবনের তুলনায় রুদ্রের সৃষ্টিশীলতা পরিমাণে সুপ্রচুর। ঈর্ষণীয় সংখ্যক কবিতা ছাড়াও তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য গান, গল্প, গদ্য; একটি কাব্যনাট্য ও চিত্রনাট্য। বর্তমান সংকলনে কবির সকল গ্রন্থিত ও অগ্রন্থিত কবিতা মুদ্রিত হল। সুরারােপিত গানসমূহও সন্নিবেশিত হয়েছে এ সংকলনে আমাদের প্রত্যাশা, ‘তারুণ্যের দীপ্র প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর এই কবিতাসমগ্র তারুণ্যশক্তির দুর্নিবার অভিযাত্রার পাথেয় হয়ে উঠবে।
Rudro Muhommod Shohidullah (জন্ম: ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর, মৃত্যু: ১৯৯১ সালের ২১ জুন) একজন প্রয়াত বাংলাদেশী কবি ও গীতিকার যিনি "প্রতিবাদী রোমান্টিক" হিসাবে খ্যাত। আশির দশকে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠে যে কজন কবি বাংলাদেশী শ্রোতাদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি তাদের অন্যতম। তার জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে অন্যতম "বাতাসে লাশের গন্ধ"। এই কবির স্মরণে বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার মোংলার মিঠেখালিতে গড়ে উঠেছে "রুদ্র স্মৃতি সংসদ"। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জন্ম তাঁর পিতার কর্মস্থল বরিশাল জেলায়। তাঁর মূল বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার মিঠেখালি গ্রামে। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। ঢাকা ওয়েস্ট এ্যান্ড হাইস্কুল থেকে ১৯৭৪ সালে এস এস সি এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭৬ সালে এইচ এস সি পাস করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮০ সালে সম্মানসহ বি এ এবং ১৯৮৩ সালে এম এ ডিগ্রি লাভ। তিনি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা। জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক। ১৯৭৫ সালের পরের সবকটি সরকারবিরোধী ও স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিবাদী কবি হিসেবে খ্যাত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, দেশাত্মবোধ, গণআন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতা, ও অসাম্প্রদায়িকতা তাঁর কবিতায় বলিষ্ঠভাবে উপস্থিত। এছাড়া স্বৈরতন্ত্র ও ধর্মের ধ্বজাধারীদের বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠ ছিল উচ্চকিত। কবিকন্ঠে কবিতা পাঠে যে কজন কবি কবিতাকে শ্রোতৃপ্রিয় করে তোলেন, তিনি তাঁদের অন্যতম। তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ভালো আছি ভালো থেকো সহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। ১৯৮১ সালের ২৯ জানুয়ারি বহুল আলোচিত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন। ১৯৮৮ সালে তাদের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে। ১৯৯১ সালের ২১ জুন রুদ্র ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।