ভূমিকা যাদের জন্য বলছি তাদের উপযুক্ত বয়সে তারাও বুঝতে পারবে এর প্রায় গল্পই পৃথিবীর সেরা গল্পকারদরে রচনা। যাঁরা রচনা করেছন তারা যেমন তেমন করে এদের তৈরি করেননি। যাদের জন্য লিখেছেন তাদের কথা তারা দরদ দিয়ে ভেবেছেন। এবং যা বলেছেন তা অত্যন্ত সুন্দর করে বলেছেন। এ গল্পের কাল সীমা নেই। এরা সর্বকালের । আমাদের দেশের কিশোররাও সুন্দর মনমাতানো কল্পনাবিস্তারী গল্প বলতে চায়। তাদের সেই দাবী এবং প্রয়োজনের কথা মনে করেই কয়েকটি সেরা গল্পের গল্প কয়েক বছর আগে আমি বলতে শুরু করি। গল্প শোনার মাঝে মাঝে তারা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গল্পকারদরে কিছু নামের সঙ্গেও পরিচিতি হবে এবং বড় হয়ে এঁদের রচনা নিজেরাই পড়ার আগ্রহ বোধ করবে, এ আশাও আমার মনে ছিল। গল্প বলতে শুরু করেছিলাম প্রখ্যাত কিশোর মাসিক ‘কচি ও কাঁচা’র পাতায় ‘ দু’জনের নিরন্তর তাগিদে: একজন ‘কচি কাঁচা’র সম্পাদক রোকনুজ্জামান খান এবং অপরজন আমার শিশূ পুত্র মারুফ করিম (জ্যোতি)। এগল্প গুলি একসঙ্গে যিনি আন্তরিক আগ্রহ নিয়ে পড়েছেন তিনি অনুজপ্রতিম শিল্পী রফিকুন্নবী। মূল রচনাগুলির রুপান্তর যে তার ভালো লেগেছে তার চিহ্ন তাঁর শিল্পসজ্জায় রয়েছে। যাদের জন্য গল্পগুরো আবার বলা তাদের যদি ভাল লাগে তাহলে আমি অনুপ্রানিত বোধ করব। আমাদের দেশে কোন বই যদি প্রকাশিত হয় তাহলে তার প্রকাশের বিলম্ব ইত্যাদির জন্য আফসোস নিরর্থক। শেষ পর্যন্ত প্রকাশিত হলে, দশজনার হাতে পৌঁছল, এটাই বড় কথা। বর্তমান বই- এর ক্ষেত্রেও একথা সত্য। জনাব রোবনুজ্জামান খানের আগ্রহ ছাড়া গল্পগুলির বাংলা পুনর্লেখন আদৌ হত না এবং বাংলা একাডেমীর প্রকাশনা বিভাগের জনাব ফজরে রাব্বি, আবুল হাসনাত, আবদুল রহমান চৌধুরী এবং আবদুস সাত্তারের সযত্ন তত্ত্বাবধান ও পরিশ্রম ব্যতীত এ পুস্তকাকার প্রকাশ ঘটত না। তাদেরকে আমার আন্তরিক প্রীতি ও কৃতজ্ঞতা জানচ্ছি। সরদার ফজলুল করিম ঢাকা
মে ১, ১৯২৫- সালের পহেলা মে বরিশালের আটিপাড়া গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন৷ বাবা খবিরউদ্দিন সরদার কৃষিকাজ করতেন৷ মা সফুরা বেগম ছিলেন গৃহিণী৷ তাঁরা দুই ভাই তিন বোন৷ সরদার ফজলুল করিমের শৈশবকাল কেটেছে গ্রামে৷ ম্যাট্রিকুলেশন শেষে তিনি প্রথম ঢাকা আসেন ১৯৪০ সালে। ঢাকায় ১৯৪২ সনে তিনি তার আই.এ. পাঠ সমাপ্ত করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৪৫ সনে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স ও ১৯৪৬ সনে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে তার সাম্যবাদী বামপন্থী সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত থাকার পর্যায়ে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিগৃহীত হন। রাজবন্দি হিসেবে দীর্ঘ ১১ বৎসর বিভিন্ন পর্যায়ে কারাজীবন যাপন করেন। জেলে থাকা অবস্থাতেই ১৯৫৪ সনে তিনি পাকিস্তান সংবিধান সভার সদস্য হিসেবে কাজ করেন। পরে ১৯৬৩ থেকে '৭১ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি পাকিস্তান হানাদারবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হন। পরবর্তিতে তিনি আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত শিক্ষক হিসেবে শিক্ষাদান শুরু করেন। তিনি ১৫ জুন, ২০১৪ তারিখে ঢাকার শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়মারা যান৷