স্বাধীনতার পর মাত্র কয়েকমাস, ধারপরই, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন মূলত যে ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়েছিল, সেই মহাত্মা গাঁধীকে হারিয়েছিল এই দেশ। তাই সমসাময়িক ভারতের ইতিহাস, মূলত গাঁধী পরবর্তী ইতিহাস। স্বাধীনতার দিনে দেশের কর্ণধার ব্যক্তিবর্গের কার্যতালিকাটি কোন কোন কর্তব্যানুষ্ঠানে ভরা ছিল, এই গ্রন্থের রচয়িতা তা উদ্ধার করেছেন এবং সেই উল্লেখের পর্ব থেকে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারতের আর্থসামাজিক ইতিহাস রচনা করেছেন। স্বাধীনতা, যতখানি উচ্ছ্বাসের ছিল, ততখানিই ছিল যন্ত্রণার। কারণ, স্বাধীনতা লক্ষ লক্ষ মানুষকে ভূমিহীন উদ্বাস্তুতে পরিণত করেছিল। দেশবিভাজনের কারণে মহাত্মা গাঁধী অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছিলেন। তাঁর হত্যা স্বাধীন ভারতকে যে বিষময়তার ইঙ্গিত দিয়েছিল, তাই প্রতি দশকে নতুনতর বিক্ষোভ, বিচ্ছিন্নতার কামনা এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ বিদ্বেষের মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠতে লাগল। ইতিহাস শুধুমাত্র রাজরাজড়ার কথন নয়, ইতিহাসে জনমানসে তিফলন এবং জীবনযাত্রার নিরন্তর সংগ্রাম প্রকৃত বিষয়বস্তু, এ গ্রন্থে রামচন্দ্র গুহ তা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ভাষা আন্দোলন, উত্তর-পূর্ব ভারতীয় রাজ্যগুলিতে বিচ্ছিন্নতাবাদ, পৃথক ধর্মভিত্তিক রাজ্য প্রতিষ্ঠার পক্ষে সশস্ত্র আন্দোলন কিংবা ভারত-চিন সীমান্ত সংঘর্ষ স্বাধীনতার পর থেকে ক্রমাগত ভারত রাষ্ট্রকে ত্রস্ত রেখেছে। যে ভারতকে নতুন করে গড়ে উঠতে হচ্ছিল, সেই ভারতে রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও, এবং ভারতের জাতি-ধর্ম-ভাষা কেন্দ্রিক ব্যাপক বৈচিত্র্য সত্ত্বেও কেন ভারত ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারছে— সেই বিস্ময়ের সহজ কোনও ব্যাখ্যা হতে পারে না। প্রায় পাঁচ দশকের সাম্প্রতিক ইতিহাসে, বিভিন্ন নথিপত্র উদ্ধৃত করে এই গ্রন্থ সেই বিস্ময়কেই জাগিয়ে তোলে গণমুখী বিশ্লেষণের সাক্ষ্যে।