"উপনিষদ -২য় খণ্ড" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ -এর লেখাঃ শাশ্বত জ্ঞানের অসীম ভাণ্ডার যে বেদ, তার নির্যাস বিধৃত রয়েছে বেদান্ত বা উপনিষদে। মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় রহস্য সে নিজেই। নির্ভয়ে মানুষের স্বরূপ উন্মােচন করে উপনিষদ মানুষকে সর্বোচ্চ মহিমায় ভূষিত করেছে। উপনিষদ ঘােষণা করেছে, প্রতিটি মানুষই স্বরূপত দেবতা। নিজের যে-পরিচয় সম্বন্ধে মানুষ সচেতন, তার চেয়ে অনেক বড় অনেক সুন্দর তার প্রকৃত পরিচয়। সসীম মানুষ আসলে অসীম। তার দুর্বল দেহ-মন-বুদ্ধির আড়ালে লুকিয়ে আছে এক চিরন্তন মানুষ, যে আসলে ভূমা; সর্বত্র পরিব্যাপ্ত হয়ে যার অবস্থান, সর্বভূতে সর্বপ্রাণীতে অনুষ্যত যার চিরন্তন অস্তিত্ব। উপনিষদ মানুষকে দেয় আত্মবিশ্বাস ও নিখিল বিশ্বের সঙ্গে একাত্মতার অনুভব। তাই প্রেম ও শক্তি উপনিষদের বাণী। স্বামী বিবেকানন্দ উপনিষদকে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর সর্বজনীন জীবনদর্শন বলে মনে করেছেন, যা মানুষে মানুষে সমস্ত বিভেদের অবসান ঘটাতে পারে। উপনিষদের দর্শন কোনও দেশ বা জাতির একক স্বত্ব নয়, সমগ্র মানবজাতিরই তা সাধারণ সম্পদ। আচার্য শঙ্কর তাঁর অসাধারণ মনীষায় এর পুনঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন সন্ন্যাসীর মঠে, তপস্বীর তপােবনে আর স্বামী বিবেকানন্দ সেই গণ্ডি ভেঙে একে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন মানুষের ঘরে ঘরে। তিনি মনে করতেন, উপনিষদকে প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়ােগ করলে, মৎস্যজীবী হয়ে উঠতে পারে আরও ভাল মৎস্যজীবী, আইনজীবী আরও ভাল আইনজীবী এবং শিক্ষক আরও ভাল শিক্ষক। কারণ, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই উপনিষদ মানুষকে অন্তর্নিহিত শক্তি সম্বন্ধে সচেতন করে তােলে ও পরিশেষে তাকে রূপান্তরিত করে দেবমানবে। ‘উপনিষদ দ্বিতীয় ভাগ’-এ স্বামী লােকেশ্বরানন্দ শঙ্কর-ভাষ্য ও রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ ভাবধারার আলােকে ছান্দোগ্য উপনিষদের সহজ ব্যাখ্যা করেছেন। উপনিষদকে সবার নাগালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সেই বিবেকানন্দ-ধারারই প্রকাশ লােকেশ্বরানন্দজীর এই প্রাঞ্জল ব্যাখ্যায়।