"একটি পেরেকের কাহিনী" উপন্যাসটির কিছু অংশ: উনিশ শ বাষট্টি সাল, পয়লা জুলাই। পশ্চিমবাংলার বুকের উপর দিয়ে গত পনেরো বছর যে প্রচণ্ড ঝড় বয়ে চলেছে সেই ঝড়ে বিরাট মহীরুহের অকস্মাৎ পতন ঘটল। পয়লা জুলাই, রবিবার। সূর্য তখন মাথার উপর। নির্মেঘ নীলাকাশ। বিনা মেঘে বজ্রপাত যদিও হয়নি কিন্তু বিদ্যুতের চেয়েও সূক্ষ্ম এক অদৃশ্য শক্তিতরঙ্গে প্রচারিত একটি সংবাদে কলকাতা মহানগরী স্তম্ভিত। নতুন বাংলার রূপকার কর্মযোগী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় অপ্রত্যাশিত ভাবে মৃত্যুর কোলে চির বিশ্রাম নিলেন তাঁরই জন্মজয়ন্তী উৎসবের দিনে। তড়িতাহত হওয়ার মতই তীব্র অতর্কিত সে সংবাদের আঘাতে অসংখ্য সমস্যাপীড়িত দেশকে এক মুহূর্তে এক অখণ্ড সত্তায় বিচলিত হয়ে উঠতে দেখলাম। এই মহীরুহের আশ্রয়ে নিশ্চিন্ত ছিল আঘাত-সংঘাতে জর্জরিত পশ্চিম বাংলার সাড়ে তিন কোটি নরনারী। আজ তারা আশ্রয়হীন, শোকবিহ্বল। তাদের নীরব ক্রন্দন আমি শুনেছি, আমি দেখেছি মহানগরীর উদ্বেল জনতাকে শান্ত হয়ে নম্র হয়ে তাদের মহানায়ককে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। পরদিন সকালে বিষন্ন ও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে ডাঃ রায়ের কর্মজীবনের ঘটনাবলী ও আলোকচিত্র দেখতে দেখতে একটা চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরছে—এই অসাধারণ মানুষটির প্রতি আমার শেষ প্রণতি কী ভাবে নিবেদন করব। জনতার ভিড়ের সঙ্গে মিশে যেতে পারলে, তাদের সঙ্গে একাত্ম হতে পারলেই আমি তৃপ্তি পেতাম। কিন্তু ভিড় আমি চিরকাল ভয় করি। কোলাহল থেকে দূরে থাকাই আমার স্বভাব। সেদিনের প্রায় সবগুলি দৈনিক সংবাদপত্র আমার সামনে খোলা….
Sagarmoy Ghosh (২২ জুন, ১৯১২ - ১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৯) একজন স্বনামখ্যাত ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক যিনি কলকাতা থেকে প্রকাশিত দেশ পত্রিকার সম্পাদকীয় দায়িত্ব পালন করে জীবন্ত কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছিলেন। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যুতে লন্ডনের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত শোকসংবাদে তাকে বাংলার ‘সাহিত্য ব্যাঘ্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। মৃত্যুর কিছু পূর্বে ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে দীর্ঘজীবী বাংলা সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।