আয় চার লাখ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত চাদে ১২ জন মানুষের অবতরণ মানি:সন্দেহে মানবজাতির জন্যে বিরাট অর্জন। ২৫ কোটি কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত মঙ্গলে যান পাঠানাে এবং সেখানে হানিমুনে যাওয়ার উচ্চাভিলাষ, এমনকি বসবাসের স্বপ্ন দেখা, ৪২মিলিয়ন কি.মি. দূরত্বে থেকে সূর্যের বিস্তারিত জানার সক্ষমতা - ইত্যাদি অগ্রযাত্রা সত্যিই মানবজাতির অহঙ্কার। এ অগ্রযাত্রার পাশাপাশি মানবজাতির অধ:পতন সমভাবে বা তার চাইতে অধিক উল্লেখযােগ্য। ব্যক্তিগত হতে শুরু করে জাতিগত হানাহানি, ব্যবসায়িক লাভের জন্যে মানুষের জীবনের অতি নগণ্য মূল্য ধরা, আমাদের একমাত্র বসবাসের স্থান পৃথিবীর অতিমাত্রায় ক্ষতি সাধন, উদরের পূজা, অবাধ যৌনতা, চতুর্দিকে ঘৃণা ছড়ানাে ইত্যাদি। আবিষ্কার আর জাগতিক উন্নতি বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। দৈনন্দিন জীবন হতে সেসব সম্পর্কহীন নয়। একটি আবিষ্কার আর অর্থনৈতিক উন্নতি যদি মানবজীবনের অন্যান্য বিষয়াদি হতে ভিন্ন ও বিচ্ছিন্ন বিষয় ধরা হয় তাহলে সেখানে নৈতিকতার অনুপস্থিতি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। নৈতিকতার অনুপস্থিতিতে দুনিয়া হবে জাহান্নাম সম। অর্থনীতিবিদ এবং বিজ্ঞানীগণ যদি নৈতিকতার বিষয়টিকে বিচ্ছিন্ন বিষয় মনে করেন তাহলে তাদের আবিষ্কার মানুষের লাভের চাইতে ক্ষতিই বেশী ডেকে আনবে । অতএব সকল মানুষের যেমন খাদ্য, বায়ু, বাসস্থান প্রয়ােজন-ঠিক তেমনি সকল মানুষ নৈতিক জীব হেতু তাকে সার্বক্ষণিক নৈতিক বন্ধনে আবদ্ধ থাকতেই হবে। জীবনের সকল বিষয়ে মানুষকে নৈতিক রেড-লাইন সামনে রেখে যাবতীয় সমাধান বের করতে হবে। এটাই স্রষ্টার সম্মানিত সৃষ্টি মানুষের প্রত্যাশা।
মল্লিকা সেনগুপ্তর জন্ম ২৭ মার্চের ১৯৬০ সালে ভারতের নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর শহরে। তাঁর কবি জীবন শুরু ১৯৮১ সালে এবং সেই থেকে তিনি ১১টি কবিতার বই, দুটি উপন্যাস এবং বিভিন্ন প্রবন্ধ লিখেছেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিদ্যা কেন্দ্রে অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। ৯০ এর দশকে তিনি অপর্ণা সেন সম্পাদিত 'সানন্দা' পত্রিকার কবিতা বিভাগের সম্পাদনা করতেন। স্বামী সুবোধ সরকারের সাথে তিনি 'ভাষানগর' নামক একটি সাংস্কৃতিক পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। মল্লিকার কবিতা আপষহীন রাজনৈতিক ও নারীবাদী হিসেবে পরিচিত। তাঁর লেখনির গুণে তিনি আন্তর্জাতিক স্তরেও প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। তাঁর লেখা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তাকে সুকান্ত পুরস্কার, বাংলা একাদেমি এ্যাওয়ার্ড এবং ফেলোশিপ ফর লিটারেচার দিয়ে সম্মানিত করেছেন। ইতিহাসের ব্রাত্য নারী চরিত্ররা প্রায়ই তাঁর লেখায় পুনর্জীবিত হয়েছেন। সমসাময়িক কবি সংযুক্তা দাসগুপ্তের ভাষায় "তার কবিতায় নারীস্বত্বা কেবলমাত্র অন্তর্ভূতি সচেতনতা হিসেবেই থেকে যায় না, সেটা প্রস্ফুটিত হয় সমস্ত প্রান্তিক নারীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক স্বতস্ফুর্ত প্রতিবাদ।"