"হৈ রে বাবুই হৈ" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: তেলের শিশি ভাঙলাে বলে/খুকুর 'পরে রাগ করাে/তােমরা যে সব বুড়াে খােকা/ভারত ভেঙে ভাগ করাে’ আধুনিক কালের এই বিখ্যাত ছড়াটির রচয়িতা কে, অনেকেই হয়তাে চট করে তা মনে করতে পারে না, কিন্তু তা সত্ত্বেও, ‘ছেলে ঘুমােলাে পাড়া জুড়লাে/বর্গি এলাে দেশে’ কিংবা চাদ উঠেছে ফুল ফুটেছে। কদমতলায় কে’র মতাে প্রাচীন ছড়াগুলির সঙ্গে এটিও তাদের সকলের মুখে মুখে। ফেরে। স্রষ্টার নাম যখন গৌণ হয়ে গিয়ে কোনও ছড়া আবালবৃদ্ধ সকলের মুখে স্থান পায় তখনই ছড়া হিসেবে সেটি সার্থক বােঝা যায়। এমন সার্থক ছড়া লেখেন বা। লিখতে পারেন একালে মাত্র একজনই। তিনি অন্নদাশংকর রায়। লােকের মুখে মুখে ফেরার মতাে তার আরও অনেক ছড়া— ‘আধ মন চাল তার/এক থালা ভাত/কে খায় ? কে খায় ?/কৈলাসনাথ’; ‘ক’ রে, তােরা ক’!/শুধান তিনি, বর্ণমালায়/ক'টা । আছে স?'; ‘মুনু মুনু মুনিয়া/শিকারী নয় গাে ওরা/ওই সব খুনিয়া’, ‘খেলব না তাে গােলামচোর/ সবাই তােরা চালাক ঘোের: ‘বিজলীর ধারা এই/এই আছে এই নেই’ প্রভৃতি নিয়ে বেরােল এই নতুন ছড়ার বই ‘হৈ রে বাবুই হৈ'। প্রতিটি ছড়ার সঙ্গে আছে একাধিক মন-ভােলানাে ছবি— নামকরা আঁকিয়ে অহিভূষণ মালিকের আঁকা।
(মার্চ ১৫, ১৯০৪ - অক্টোবর ২৮, ২০০২), একজন স্বনামধন্য বাঙালি কবি ও লেখক। ভারতের উড়িষ্যা জেলার তার জন্ম। তিনি একজন বিখ্যাত ছড়াকারও। অন্নদাশঙ্করের জন্ম হয় ব্রিটিশ ভারতে বর্তমান উড়িষ্যার ঢেঙ্কানলে । তাঁর পিতা ছিলেন ঢেঙ্কানল রাজস্টেটের কর্মী নিমাইচরণ রায় এবং তাঁর মাতা ছিলেন কটকের প্রসিদ্ধ পালিত বংশের কন্যা হেমনলিনী । ছোটবেলায় ঢেঙ্কানলে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় । ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন । এরপর সংবাদপত্রের সম্পাদনা শিখতে কলকাতা বসুমতী পত্রিকার সম্পাদক হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষের কাছে যান । তিনি শর্টহ্যান্ড, টাইপরাইটিং এবং প্রুফরিডিং-ও শেখেন । কিন্তু এই কাজ তাঁর ভালো লাগেনি । এরপর তিনি কটকের র্যাভেনশ কলেজ থেকে আই.এ পরীক্ষা দেন এবং তাতে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন । ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে বি.এ পরীক্ষাতেও তিনি পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম স্থানাধিকারী হন । ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে এম.এ পড়তে পড়তে আই.সি.এস পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয়বারে পূর্ববর্তী রেকর্ড ভেঙে প্রথম স্থান অধিকার করেন । তিনিই প্রথম ভারতীয় হিসেবে এ গৌরব লাভ করেন। সেই বছরেই তিনি সরকারি খরচে আই.সি.এস হতে ইংল্যান্ড যান । সেখানে তিনি দুই বছর ছিলেন । এই সময়ে তাঁর ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী পথে প্রবাসে বিচিত্রায় প্রকাশিত হয় । ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন কন্যা অ্যালিস ভার্জিনিয়া অনফোর্ডকে বিবাহ করে তিনি তাঁর নাম দেন লীলা রায় । লীলা রায় বহু বই বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন । অন্নদাশঙ্করের অনেক লেখা লীলাময় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছিল । ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রথম নদীয়া জেলার ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কাজে যোগ দেন । তিনি বছর এই পদে থেকে বিভিন্ন জেলায় কাজ করে কুমিল্লা জেলায় জজ হিসাবে নিযুক্ত হন । ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সরকারী কাজে নিযুক্ত থেকে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বিচার বিভাগের সেক্রেটারি হন । ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্বেচ্ছায় সরকারী চাকরি থেকে অবসর নেন । ২৮ অক্টোবর , ২০০২ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।