ফ্ল্যাপে লিখা কথা প্রত্যেক লেখকেরই নিজস্ব এক ভরকেন্দ্র থাকে। যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি নিজের জগৎ নির্মাণ করেন। অথবা সেখানে পা রেখেই তিনি নিজের বোধ-ভাষাকে অনন্ত নক্ষত্রবীথিতে ছড়িয়ে দেন। আর বড় লেখকরা অনেক সময় এই ভরকেন্দ্রও বদলে ফেলার ক্ষমতা রাখেন। গল্পকার পারভেজ হোসেনে এই পঞ্চম গল্পগ্রন্থ ডুবোচর এর এসে মনে হচ্ছে, তিনি তাঁর জীবন ও শিল্পভ্রমণের মধ্যপর্বে এসে সেটিকেও বদলে ফেলার সক্ষমতা দেখিয়েছেন। তাঁর বিগত গল্পবইগুলোতে আমরা ফিরে ফিরে পেয়েছি বিষখালি-সুগন্ধা-ধানসিঁড়ি-জাঙ্গালিয়া নদীতীরবর্তী জীবনের গাঢ় আখ্যান এমনকি নগরজীবনের গল্পেও যেন এর ঘ্রাণ থাকত। কিন্তু এই বইয়ে এসে যেন তিনি বড় ধরনের বাঁক নিলেন। আর কেবল গল্পই লিখেননি তিনি, বরং জীবনের এমন সব অনুভূতি ও জিজ্ঞাসার সামনের নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন যে, কখনো কখনো তাঁর গল্পগুলো হয়ে উঠেছে আত্মদর্শন-উপলব্ধ অন্তর্গত বয়ান। গল্পগুলো পাঠ করতে করতে জীবনানন্দের গদ্যপদ্যর ঘ্রাণ টের পাবেন পাঠক, কিন্তু এতে জীবনানন্দর ভাষাপ্রভাবের সঙ্গে উভয় লেখকের ভূগোল, নৈকট্যও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। হয়তোবা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিবেশটাই এমন যা এক -একজন লেখককে জীবনান্দতুল্য করে তোলে। আশির দশকের অন্যতম শক্তিমান গল্পকার পারভেজ হোসেন তাঁর এই নতুন বইয়েও লিখেছেন গ্রাম ও শহরের গল্প। কিন্তু লিখেছেন অন্য এক ভাষায়, আরো নিবিড় করে, পাঠকের অন্ত খুঁড়ে খুঁড়ে।
পারভেজ হােসেন ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর-এ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬০ সনে। বাংলা অনার্সসহ এমএ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে। আশির দশকের ছােটোকাগজ সংবেদ-এর সম্পাদক পারভেজ হােসেন বর্তমানে মুদ্রণ ও প্রকাশনা ব্যবসায় জড়িত। ‘জেমকন সাহিত্য পুরস্কার ২০১০' পেয়েছেন যে জীবন ফড়িংয়ের দোয়েলের গল্পগ্রন্থের জন্য। ‘প্রথম আলাে বর্ষসেরা বই ১৪১৯ পেয়েডেন ডুবােচর গল্পগ্রন্থের জন্য।