কিংবদন্তি ছড়াকার সুকুমার বড়ুয়ার লেখা শিশু-কিশোর উপযোগী গল্পের বই ‘চন্দনার পাঠশালা’। ছড়া কবিতায় সুকুমার বড়ুয়ার যেমন অবাধ বিচরণ তেমনি গল্পে আমরা তাকে খুব একটা পাই না। এ বইটি সুকুমার রায়ের প্রথম গল্পের বই। প্রিয় পাঠক বন্ধুরা তাহলে বুঝতেই পারছ, বইটি কতটা মূল্যবান। প্রায় ৫৫ বছরের লেখালেখির মধ্য থেকে এ বইয়ে সাতটি গল্প সূচিবদ্ধ করা হয়েছে। গল্পগুলো হলোÑচন্দনার পাঠশালা, গেঁয়োভূত, হাসুর গোলাপ, পাঁচুকাকা, কেরামতের কেরামতি, মামার বাড়ি এবং রামুর হারিয়ে যাওয়া। প্রতিটি গল্পই অনবদ্য আর সুপাঠ্য। ‘চন্দনার পাঠশালা’ বইটির প্রথম গল্প। একজন কবির মেয়ে চন্দনা। চন্দনা ঢাকাতে পড়ত। কিন্তু গ্রামকে চেনানোর জন্য তার বাবা তাকে নিয়ে গ্রামের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়। শহরজীবনের কোলাহল ছেড়ে গ্রামীণ পরিবেশে চন্দনারও মন টিকে যায়। চন্দনার বাবা তাকে কিছু গল্পের বই কিনে দেয় পড়তে। সেগুলো সে মনোযোগ দিয়ে পড়ে। এ ছাড়া তার স্কুলে ভালো রেজাল্ট করতে হবে বলে সে আরো মনোযোগী হয়ে ওঠে পড়াশোনায়। ‘গেঁয়োভূত’ এ বইয়ের একটি মজার গল্প। তোমরা যারা ভূতের গল্প পড়তে আগ্রহী তাদের জন্য এই গল্পটি। ‘মামার বাড়ি’ গল্পটিতে উঠে এসেছে মামাবাড়ির কত স্মৃতি। পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের ছড়ায় যে মামাবাড়ির চিত্র পাওয়া যায় সে চিত্রই দেখতে পাওয়া যায় এ গল্পে। ‘রামুর হারিয়ে যাওয়া’ গল্পটি এ বইয়ের সর্বশেষ গল্প। ৪০ পৃষ্ঠার এ বইটির প্রতিটি গল্পের সাথেই আছে একাধিক আঁকা ছবি। সুকুমার বড়ুয়ার লেখা খুবই আকর্ষণীয়। ছোট ছোট চরিত্র আর ছোট ছোট সংলাপের মধ্য দিয়ে একটি ছোটগল্পের যে চাহিদা তিনি তৈরি করেন তা পাঠকমাত্রই বুঝতে পারবে। আমাদের চারপাশের মানুষ প্রকৃত কল্পনা বাস্তবতাকে নিয়ে তার লেখার পরিধি। শিশুমনকে ঘুম পাড়াতে নয়, জাগিয়ে তুলতে তার লেখা বেশ কার্যকর। গল্পগুলো পড়তে পড়তে কোথায় যেন চলে যেতে হয়। কোন রাজ্যে যেন নিয়ে যায় লেখক। সেই যে ছোটগল্পের সংজ্ঞা রয়েছে যে, ‘শেষ হয়েও হইলো না শেষ’ সে রকম এই গল্পগুলো। অনেক সময় মনে হবে লেখক যেন তার নিজের জীবনের গল্পই ছদ্মবেশে বলে যাচ্ছেন গল্পে গল্পে। এটি সংগ্রহে রাখার মতো একটি বই বলা যায়।