পশুপাখিদের মধ্যে শেয়াল তার ধূর্ত বুদ্ধির জন্য বিখ্যাত। ছলে-বলে-কৌশলে তার শিকার সে করেই ছাড়বে। কিন্তু অনেক সময় তার বদ মতলব হাসিল করতে পারে না। এমনই একটি মজার চরিত্র এই শেয়ালের যে, বাচ্চারা তাকে শেয়াল মামাও ডাকে। কাজী কেয়া রচিত ‘শেয়াল রাজা হতে চেয়েছিল’ কিশোরদের উপযোগী একটি গল্প। যদিও গল্প যখন মুখে মুখে শোনানো হয় তখন সেটা সব বয়সীরাই উপভোগ করতে পারে। কিন্তু আধো আধো পড়তে শেখাদের জন্য একটু বড় গল্প পড়াটা কঠিন। বনের রাজা সিংহ। তার শক্তি আর চেহারার সাথে অন্য কোনো পশুর মিল নেই। তার হুংকারে সমস্ত বন কেঁপে ওঠে। তাকে সবাই মান্য করে চলে। বিনা পরিশ্রমেই তার সামনে খাবার এসে হাজির হয়। বনের বাঘও তাকে মান্য করে চলে। কেননা বাঘের থেকেও তার শক্তি বেশি। এমন সম্মানী আর আয়েশি জীবন দেখে শেয়ালের লোভ জাগে সেও বনের রাজা হবে। তার যেমন ইচ্ছে তেমন কাজে লেগে পড়ে। ধর্মগুরুর ছদ্মবেশ নিয়ে বনের মধ্যে ঘুরতে থাকে। ওদিকে বনের রাজা সিংহ অসুস্থ। ফলে সেও চায় তার রোগমুক্তি হোক। এ সুযোগটিই কাজে লাগায় শেয়াল। সিংহের প্রধান চিকিৎসক হলো ভালুক। সিংহের সাথে দেখা করে সে প্রথমে ভালুকের নামে নিন্দা করে। ভালুক তাকে সুস্থ করতে পারবে না বলে সে সিংহকে কুমন্ত্রণা দেয়। সিংহও সেই কথা বিশ্বাস করে। এরপর একে একে ক‚টকৌশল করে সিংহকে রাজি করিয়ে ফেলে তার রাজক্ষমতা শেয়ালকে দিতে! কিন্তু সিংহ এ ষড়যন্ত্র বুঝতে না পারলেও বনের অন্য অন্য পশুপাখি ঠিকই বুঝতে পারে। বানর আর বাঘ মিলে শেয়ালকে আটকে ধরে। ভয়ে শেয়াল পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে! এর মধ্যে রয়েছে মজার মজার সব ঘটনা আর চরিত্র। নানা সংলাপ আর ছাড়া দিয়ে এত সুন্দর করে গল্পটি লেখা যে এটা পাঠ করে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। টান টান উত্তেজনা আর রোমাঞ্চকর অনুভূতি জাগিয়ে তোলে এ গল্প। তবে গল্পটি থেকে আমাদের এ শিক্ষা নেওয়া উচিত যে, ধূর্ত বুদ্ধি দিয়ে হয়তো সাময়িক লাভবান হওয়া যায় কিন্তু ধরা পড়ে গেলে সব মাটি হয়ে যায়। এককথায় বলা যায়, অনেক দিন মনে থাকার মতো একটি গল্প আছে এ বইটিতে।