কোনো এক নাম না জানা দেশে ঝাঁকড়া পাতাওয়ালা একটি গাছের ডালে বাস করে দুটি পাখি। মা চাতক আর ছেলে চাতক। ছেলে এক বুক ভালোবাসা নিয়ে মাকে দেখে। বিস্ময় ভরা চোখে আকাশ দেখে। পাখিদের ওড়াউড়ি দেখে―চারপাশের সব কিছু দেখে আর মুগ্ধ হয়। মাত্র ১০ দিন বয়স, তাই এখানো বুদ্ধিমান হয়ে ওঠেনি চাতক ছেলে। তবে এটুকু বোঝে, যারা আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে তারা পাখি। তার মানে, পাখি হলে উড়ে বেড়ানো যায়। একদিন মা বাসায় ছিল না। চাতক ছেলে একাকী বসে পাখিদের ওড়াউড়ি দেখছিল। হঠাৎ তার মনে প্রশ্ন এলো―পাখি হলে যদি উড়ে বেড়ানো যায়, তবে আমি উড়ে বেড়াতে পারছি না কেন? এনায়েত রসুলের লেখা ‘বৃষ্টিভেজা দেশ’ গল্পটির শুরু হয়েছে এভাবে। এটুকু পড়ে নিশ্চয়ই পুরো গল্পটি পড়ার আগ্রহ বেড়ে গেছে শতগুণ! ১৬ পৃষ্ঠার এ বইটি পড়তে খুব বেশি সময় লাগবে না। কিন্তু এই গল্পটি পড়ে যে অনাবিল আনন্দ পাওয়া যাবে তা বলা বা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। নিজে নিজেই গল্পটি পড়ে শেষ করতে হবে। তবে ছেলে চাতকের মায়ের কথা না শুনে মায়ের সাথে রাগ করে অবাধ্য হওয়ার পরিণতি তাকে যেমন কষ্ট দিয়েছে তেমনি একটা নতুন অভিজ্ঞতার মধ্যেও টেনে নিয়ে গেছে। যখন সে উড়তে উড়তে পথ হারিয়ে একটা অজানা দেশে গিয়ে পড়ল তখন তার প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। এক ফোঁটা পানির জন্যও তাকে হাহাকার করতে হয়েছে। ভাগ্য ভালো যে ওর দেখা হয় পায়রার সাথে। পায়রা ওকে সুস্থ করে নিয়ে যায় এমন একটি দেশে যেখানে সবুজ-শ্যামল বন-বনানী নদী-পাখিদের কলতানে মুখরিত। ওরা যে দেশে আসে সে দেশের নাম বাংলাদেশ। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দেশ। চাতক বলে, এমন সুন্দর দেশ আমি কোথাও দেখিনি। খালামণি, আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে চলো। মাকে নিয়ে আমি বৃষ্টিভেজা এই সবুজ দেশে ফিরে আসব। চমৎকার এই গল্পের বইটি পড়তে চাইলে প্রথমেই এটি সংগ্রহ করতে হবে। পড়া শেষে প্রিয় বন্ধুকেও বইটি পাঠ করতে দিতে ভুলো না। কারণ গল্প একা পড়েই মজা পাওয়া যায় না। সবাই মিলে যখন গল্পটি পড়া হয় তখন সবার অনুভ‚তি এক না হলেও একধরনের ভালো লাগা সবারই এক হয়ে যায়।
Enayet Rasul স্বনামখ্যাত শিশুসাহিত্যিক মোহাম্মদ নাসির আলী ও বেগম মেহের উন নিসা’র দ্বিতীয় পুত্র। ১৯৫৩ সালের ১২ জুন বিক্রমপুরের ধাইদা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। লেখাপড়া ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ওপর। ১৯৬৫ সালে একটি ছড়া লেখার মাধ্যমে লেখালেখির জগতে বিচরণ শুরু হয়। প্রথম ছড়াটি ছাপা হয় ‘জুনিয়র রেডক্রস’ পত্রিকায়। সব বয়সী পাঠকদের জন্যে লেখেন এনায়েত রসুল। তবে মূলত শিশুসাহিত্যিক। শিশুসাহিত্য সষ্টিতে তাঁর দায়বদ্ধতা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। এনায়েত রসুলের পাঠকপ্রিয় বইগুলোর মধ্যে এক আকাশ মেঘ একপশলা বৃষ্টি, ‘পোড়োবাড়ি রহস্য', ডক্টর নিপুর এক্সপেরিমেন্ট', ‘নিঝুমগড় ভয়ঙ্কর’, ‘ভয়ঙ্করের হাতছানি’ বাতিঘরের বুড়ো’, ‘অন্যরকম বুবাই’, ‘ব্ল্যাকহোল’ ‘ভাষার কথা লেখার কথা’, ‘মেঘপাখি’ ‘মিশন উইথ মাউন্টব্যাটেন, ‘বাঙালির জাতিসত্তা ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, ‘বিজয়ের ছবি', 'মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে’ ‘ভূতসমগ্র', ‘কিশোর গল্পসমগ্র ‘চিচি’, ‘খেয়ালি রাজার দেশে, ‘অপি ও চেঙা বেঙা’ ‘পিকু ও ছেলেধরা', ফুলবালিকা', এক মায়ের গল্প' ইত্যাদি। ‘এক মায়ের গল্প’টির জন্য তিনি ১৯০৮ সালে মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন । বর্তমানে এনায়েত রসুল জাতীয় দৈনিক আমার দেশ’-এ সহ-সম্পাদক পদে কর্মরত। সেইসঙ্গে ছোটদের পাতা ‘এক্কাদোক্কা' পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন।