শিশু-কিশোররা অনেক সময় মা-বাবার অবাধ্য হয়। তারা বাইরে বেশি সময় কাটাতে চায়। কিন্তু মা-বাবারা এ নিয়ে চিন্তায় থাকেন। কারণ কখন কোন দুর্ঘটনা যে ঘটে তার তো কোনো ঠিক নেই। যখন তারা কথা না শুনতে চায় তখন তাদের ছেলেধারর ভয় দেখানো হয়! আসলেই কি ছেলেধরা বলে কিছু আছে? আমাদের সমাজে এমন কিছু খারাপ মানুষ আছে যারা ছোট ছোট শিশু-কিশোরদের ধরে নিয়ে যায়। তাদের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে। তাদের দ্বারা মাদকের ব্যবসা করায়, ভিক্ষা করায়। এমন আরো অনেক জঘন্য কাজে তাদের নিয়োজিত করে। আবার অনেক ছেলেধরা আছে যারা শিশু-কিশোরদের আটকে রেখে তাদরে পিতা-মাতার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করে। আসলে এগুলো শুধু নাটক-সিনেমা-গল্পেই নয়, সত্যিকারের ঘটনাও রয়েছে। ‘পুতলি ও ছেলেধরা’ দীপু মাহমুদের একটি দীর্ঘ গল্পের বই। ৪০ পৃষ্ঠার এ বইটিতে আটটি পর্বে ভাগ করে এই গল্পটি তিনি লিখেছেন। রহস্য, রোমাঞ্চ আর গোয়েন্দা বই যারা পড়তে ভালোবাসে তাদের জন্য এটি ভালো লাগার মতো একটি গল্প। ১১ বছরের মেয়ে পুতলি। ছেলেধরারা তাকে ধরে নিয়ে গেছে। মা-বাবা তাকে না পেয়ে পাগলপ্রায়। থানায় গিয়ে ওসি সাহেবের কাছে সাহায্য চায়, পুতলিকে যাতে ফিরে পায়। টেলিভিশনে পুতলির হারিয়ে যাওয়ার সংবাদ প্রচারিত হয়। ছেলেধরারা পুতলির বাবার কাছে চিঠি পাঠায় দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে। বাবার সাথে পুতলির অনেক সখ্য ছিল। বাবা তাকে নানা রকম গল্পের বই পড়তে দিত। নানা জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেত। কোনো বিপদে পড়লে সেখান থেকে কী করে উদ্ধার পাওয়া যাবে তাও তাকে শিখিয়েছে নানাভাবে। পুতলিও বুদ্ধিমতী। ছেলেধরারা তাকে যেখানে আটক করেছে তার ঠিকানা সে বাবার শেখানো নানা ইঙ্গিতে বিভিন্ন জায়গায় লিখে রেখেছে। পুতলি অপেক্ষা করছে কখন তাকে মুক্ত করে নিয়ে যাবে এই সংকেত দেখে। খুবই উত্তেজনা আর বুদ্ধির কৌশল রয়েছে এই গল্পে। বন্ধুরা তোমরাও যদি এমন কোনো সমস্যায় পড়ো তাহলে কীভাবে উদ্ধার পাবে তা কি ভেবেছ? এই গল্পটি খুবই সহজ ও সাবলীলভাবে লেখা। পড়তে পড়তে মনে হবে তুমিও যেন পুতলির উদ্ধার অভিযানের একজন হয়ে গেছ। রহস্যময় পেন্সিল আমিনুল ইসলাম মামুন গল্পের নামে যখন বইয়ের নামকরণ হয় তখন সেই গল্পটি যে একটি বিশেষ গল্প তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ‘রহস্যময় পেন্সিল’ এ বইয়ের প্রথম গল্প। আর গল্পকার আমিনুল ইসলাম মামুন এ গল্পের নামেই বইটির নামকরণ করেছেন। এ ছাড়াও বইটিতে রয়েছে আরো ৯টি গল্প। গল্পগুলোর নাম হলো―ধূর্ত শেয়াল, সাদির বুদ্ধি, মাহির লাটিম, ভালো মানুষ, দুটি গাভীর গল্প, তানিমের পাখি, রাজপুত্র, পাখির প্রতি ভালোবাসা এবং পতাকা। প্রতিটি গল্পের নামকরণের মধ্যেই যেন গল্পের কাহিনির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। গল্পের রচনাকৌশল এতই নিপুণ যে পাঠককে গল্প থেকে বিচ্ছিন্ন হতে দেয় না। বইয়ের প্রথম গল্প ‘রহস্যময় পেন্সিল’ তেমনই একটি গল্প। বিপ্লব নামের স্কুলপড়–য়া এক কিশোরের মন ভালো নেই! তার স্কুলের ড্রইং ক্লাসে তাকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে। কারণ সে ভালো ড্রইং করতে পারে না। পরীক্ষায় কোনোমতে টেনেটুনে পাস করে। একদিন তার সাথে এক মুসাফিরের দেখা হলো। সেই মুসাফির তাকে একটি পেন্সিল দিল। এর পর থেকে সে যা কিছুই আঁকে সবই অনেক সুন্দর আঁকা হয়ে যায়। এমনকি স্কুলের সবার চেয়ে তার ড্রইং ভালো হয়। এতে সবাই সন্দেহ করে! কী করে বিপ্লবের ড্রইং এত ভালো হচ্ছে! সবাই মিলে শিক্ষকের কাছে এর সমাধান চায়। অবশেষে মুসাফিরের দেওয়া সেই পেন্সিল একটি পুকুরে ফেলে দেয়। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, এরপর সে নিজে নিজেই অনেক ভালো ছবি আঁকতে পারে। পাখি, শেয়াল রাজপুত্র এসব নিয়েও গল্প আছে এ বইয়ে। আছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ওপরেও গল্প। পাঠকমাত্রই গল্পগুলোকে লুফে নেবে। বইটির একটি বিশেষ দিক হলো, প্রতিটি গল্পের মধ্যেই একটা শিক্ষণীয় বিষয় লক্ষণীয়; শুধু গল্প পড়ার জন্য গল্প নয়। ৪০ পৃষ্ঠার গল্পের বইটির প্রতিটি গল্পের সাথে রয়েছে চমৎকার সব আঁকা ছবি। বিভিন্ন পাঠাগারের সংগ্রহে রাখা ও স্কুলের পাঠ্য হিসেবে বইটির বেশ কিছু গল্প নির্বাচিত হতে পারে। মৌলিক গল্প বলে এসব গল্প পড়ে আলাদা স্বাদ পাওয়া যাবে। গল্প পড়ে যদি গল্প মনে থাকে আর সেই গল্প যদি বন্ধুদের সাথে বলা যায় তবে সেই গল্পই সেরা গল্প। তেমন সেরা গল্প এ বইটিতেও রয়েছে।
দীপু মাহমুদ। জন্ম ২৫ মে ১৯৬৫, নানাবাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গার গ্রাগপুর গ্রামে। শৈশব ও বাল্যকাল কেটেছে দাদাবাড়ি হাটবোয়ালিয়া গ্রামে। বেড়ে ওঠা স্নেহময়ী, কালিশংকরপুর, কুষ্টিয়া। পিতা প্রফেসর মোহাম্মদ কামরুল হুদা, মা হামিদা বেগম। পড়াশোনা করেছেন কুষ্টিয়া জিলা স্কুল, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতায়। আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পিএইচডি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা একশ ছাড়িয়েছে। স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আয়োজিত অগ্রণী ব্যাংক-শিশু একাডেমি শিশুসাহিত্য পুরস্কার, সায়েন্স ফিকশন সাহিত্য পুরস্কার, এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার, শিশুসাহিত্যিক মোহাম্মদ নাসির আলী স্বর্ণপদক, নবাব সিরাজউদ্দৌলা স্বর্ণপদক, আনন্দ আলো শিশুসাহিত্য পুরস্কার, সাহিত্য দিগন্ত লেখক পুরস্কার, আবু হাসান শাহীন স্মৃতি শিশুসাহিত্য পুরস্কার, কবি জীবনানন্দ দাশ স্মৃতিপদকসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। পেয়েছেন সম্মাননা।