প্রত্যেকেরই একটা জন্মদিন থাকে। জন্মদিন মানেই হলো সবাই মিলে আনন্দ করা, কেক কাটা, ঘর সাজানো, গান করা, নাচ করা, আরো কত কী। সাধারণত বাবা-মা বড় ভাই-বোনেরাই ছোটদের জন্মদিনের আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এ বইটির গল্পটি একটু ব্যতিক্রম। ‘মায়ের জন্মদিন’ গল্পের নামেই বইটির নামকরণ করেছেন গল্পকার মানুন সারওয়ার। ইফতি, তিপতি ও দিপতি তিন বোন। ওদের বাবা একটি চা বাগানে চাকরি করত। হঠাৎ বাবা মারা যাওয়াতে ওদের মা বেশ অসহায় হয়ে পড়ে। চা কোম্পানি ওদের এই দুরবস্থার কথা বিবেচনা করে ওদের মাকে চা কোম্পানিতে একটি চাকরি দেয়। মা সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে ইফতি, তিপতি ও দিপতির জন্য। ওরাও বোঝে যে ওদের মা কত ভালোবাসে ওদের। ইফতি হতে চায় ডাক্তার, তিপতি হতে চায় ব্যাংকার আর দিপতি হতে চায় শিক্ষক। আর ওদের এই স্বপ্ন পূরণে জন্য ওরা স্কুলে যায় নিয়মিত আর পড়াশোনাও করে মনোযোগ দিয়ে। স্কুলে যাওয়ার সময় কিছু টাকা দেয় ওদের কিছু কিনে খেতে। কিন্তু ওরা জানে কিছুদিন বাদেই ওদের মায়ের জন্মদিন। ওরা তিন বোন মিলে যুক্তি করে, ওরা মায়ের জন্মদিন পালন করবে। সেই অনুযায়ী ওরা একটু একটু করে টাকা জমাতে থাকে। দেখতে দেখতে মায়ের জন্মদিনও সামনে চলে আসে। তিন বোন মিলে মায়ের জন্মদিনে মাকে একেবারে চমকে দেয়। মা-ও অনেক খুশি হয় মেয়েদের এমন ভালোবাসা দেখে। বন্ধুরা, তোমরা কি তোমাদের বাবা কিংবা মায়ের জন্মদিন এমন করে পালন করেছ? যদি না করে থাকো তাহলে এ বইয়ের গল্পের মতো তোমরাও একটু একটু টাকা জমিয়ে মা কিংবা বাবার জন্মদিন পালন করতে পারো। ১৬ পৃষ্ঠার বইটির প্রথম গল্প ‘সুমাইয়া’ও একটি চমৎকার গল্প। সুমাইয়া নামের ফুটফুটে সুন্দর মেয়েটি কথা বলতে পারে না। এ নিয়ে তার মা-বাবা, ভাই সবাই অনেক চিন্তিত ও দুঃখিত। চোখের ইশারায় কথা বলে মেয়েটি। অনেক ডাক্তার দেখানো হয়েছে; কিন্তু এখনো কোনো ফল পাওয়া যায়নি। একদিন সুমাইয়া ছাদে কাকদের রুটি খেতে দিয়েছে, তখন ওর মা ওর কাছে আসে। এ সময় হঠাৎ করেই সুমাইয়া ‘মা’ বলে ডাক দিতে পারে! গল্প দুটি মানবিক ও শিক্ষণীয়, তাই বইটি পাঠে তোমরাও সমৃদ্ধ হবে।
ছড়াকার মামুন সারওয়ার জন্মেছেন ১৯৮০ সালের প্রথম দিনে। জন্মস্থান ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে। বাবা খ্যাতনামা স্কুলশিক্ষক আলহাজ মুহাম্মদ হযরত আলী। মা গৃহিণী মোসাম্মত খায়রুন নেছা। বাবার সরল জীবন মামুনকে প্রভাবিত করেছে দারুণভাবে। তাই তাঁর লেখা ছড়ায় উঠে আসে সরল মানুষের প্রতিচ্ছবি। মামুন সারওয়ার পড়াশোনা শেষ করেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ নিয়ে। মামুন সারওয়ার শৈশবে জড়িত ছিলেন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠনের সঙ্গে। পরবর্তী সময়ে জড়িত ছিলেন বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে। কাজ করেছেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমী প্রকাশনা, দৈনিক ইত্তেফাক-এর কচি-কাঁচার আসরে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির টিভি চ্যানেল ‘চ্যানেল আই’-এ কর্মরত। বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্পের ৫ম ব্যাচে অংশগ্রহণ তাঁর লেখালেখিকে ঋদ্ধ করেছে। তাঁর প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর মাসিক শিশু পত্রিকায়। প্রথম বই মায়ের হাতের পাখা প্রকাশিত হয় ২০০৫ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। এরপর তাঁর ছয়টি ছড়ার বই ও একটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে। ছড়া ও শিশুসাহিত্য চর্চার পাশাপাশি মামুন সম্পাদনা করছেন ছড়ার কাগজ লাটাই। সম্পাদনার মুন্সিয়ানায় কাগজটি সুধিজনের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। বই ও গীতিকবিতার জন্য পেয়েছেন কবি হাবীবুর রহমান সাহিত্য পুরস্কার ২০১৪, ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার ২০১৪, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সাহিত্য পুরস্কার, নড়াইল বেনাহাটি পাবলিক লাইব্রেরি সম্মাননা পুরস্কার ও রাজশাহী থেকে মহিউদ্দিন আহম্মদ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার। রবীন্দ্রসংগীত শোনা, পুরনো বই ও জার্নাল সংগ্রহ করা এবং বরেণ্য লেখকদের সান্নিধ্যে থাকা তাঁর প্রিয় শখ। বর্তমানে বসবাস করছেন ঢাকার উত্তরায়।