ফ্ল্যাপে লিখা কথা পোজুওলির অতিতুচ্ছ অকিঞ্চিৎকর জীবন থেকে বিশ্ব চলচ্চিত্রের ঝলমলে জগতের রাণী হয়েছিলেন সোফিয়া লোরেন। বর্ণাঢ্য সে জীবন কাহিনী বিধৃত হয়েছে এখানে- অবৈধ জন্মের দুঃখ কষ্ট অবহেলা বঞ্চনা; দারিদ্র, অনাহার; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ সেই দিনগুলো, রোমেন সিনেমা জগতের মানুষের আচরণ; সহযোগিতা-অসহযোগিতা, ক্যাথলিক চাচ্র্চের আক্রোশ, শাস্তি- কার্লো পন্টির সঙ্গে সম্পর্কের বৈধতা-অবৈধতা নিয়ে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা- সব কিছু, সব কিছুই বিধৃত- ‘সোফিয়া লোরেন: তাঁর আপন কথা’য়। স্বামী কে হবে? কার্লো পন্টি নাকি ক্যারি গ্রান্ট? এ নিয়েও দুঃসহ মানসিক যন্ত্রনা ভোগ করতে হয়েছে তাঁকে। মাতৃত্বের জন্য যে অপরিসীম দৈহিক ও মানসিক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে- তাও আছে এখানে।
সোফিয়া লোরেন ১৯৭৯ পর্যন্ত সত্তুরটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। সে-সব ছবি করার আনন্দ বিষাদের গল্প আছে এখানে। এ ই হোশনার আগেও জীবন কাহিনী লিখেছেন- আর্নেস্ট হেমিংওয়েকে নিয়ে ‘পাপা হোমিংওয়ে’ এবং অভিনেত্রী ডোরিস ডে-কে নিয়ে ‘ডোরিস ডে’। দু’টোই শীর্ষ বিন্দু ছুঁয়েছে। ‘সোফিয়া’ও তাই।
তাঁর জীবনের যেটুকু জানানো উচিৎ জানানো উচিৎ শুধু সেটুকুই সোফিয়া লোরেন বলেননি বলেছেন আরো অনেক কিছু। কোন ভাণ ভণিতা না করে, একেবারে স্পষ্টভাবে। বইয়ের সবগুলো পাতা ভরেছেন তাঁর সুঃখ-দুঃখ নিয়ে, জ্ঞান দিয়ে আশা দিয়ে হতাশা দিয়ে স্বপ্ন দিয়ে স্বপ্নভাঙার আর স্বপ্ন বাস্তবায়নের গল্প দিয়ে। এ ই হোশনার দীর্ঘ চার মাস প্রতিদিন তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। দীর্ঘ চারটিমাস শেষে সোফিয়া বললেন- ‘ওহ্ মনে হচ্ছে কাটাছেঁড়ার মতো বিশ্লেষণ হলো আমার’। আসলেও হয়েছে তাই। ১৯৭৯ পর্যন্ত যে সোফিয়া- এখানে তার পুরোটাই রয়েছে।
এ বই পাঠকদের ব্যক্তিগত সংগ্রহের জন্যেও উপযুক্ত।
ভূমিকা একদা ছোট্ট একটি মিয়ে ছিল। তার পা দু’টো ছিল লম্বা- চিকন। চোখ দু’টো বড় আর চোখ-মুখে কেমন এক ভয় সবসময়। সে নিজেই নিজেকে যারপর নাই অপছন্দ করতো-কল্পলোকের পরীরা তাকে পছন্দ করে না এমন এক ভয় ছিল তার মনে। তবে মাটির বুকে গজিয়ে ওঠা ঘাসের প্রতিটি পাপড়ি এবং বিশ্বাস করতো রত্ন যে- খোঁজে, রত্নের কথা কখনো সে বলে না। বড় গোলমেলে তিক্ত ছিল তাই নিয়েই সে শেষমেশ বিশ্বটাকে আবিষ্কার করেছেন, আবিষ্কার করেছে বেয়ে ওঠার জন্য পাহাড় পর্বত; দৌড়ানোর জন্য প্রশস্ত পথ।
সে আলিঙ্গন করেছেন সমস্ত বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডকে। সব কিছুই ছিল তার- দেখার, অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের। কিন্তু জীবন তাকে যে ভূমিকা দিয়েছিল তাকেই ছিল তার অসীম ভয়। সুদূরে এক গন্তব্য- প্রবল শক্তিতে সোজা হেঁটে সেখানেই তাকে যেতে হবে- শেষমেশ যাওয়া হবে কি হবে না এই ছিল তার ভয়-ভয় ছিল তার দুর্বলতাকে, ভয় ছিল তার ভালোবাসাকে। কিন্তু কখনো দমেনি-নড়েনি চুল পরিমাণ। অবশেষে সব ভয়কে জয় করেছে একদা ছোট্ট সেই মেয়েটি।
এই বই তাঁকেই উৎসর্গ করা হলো- তাঁকে এবং সেই সব ছোট্ট মেয়েদের যাদের আছে বড় বড় চোখ লম্বা, লম্বা পা আর গোলমেলে তিতকুটে জন্মের শিকড় বাকড়।