ফ্ল্যাপের তথ্য এফএম মানে ফিরিঙ্গি মডিউল; মাউস মানে কিলিকবাজ ইঁদুর, আইপি মানে ইনডিসেন্ট প্রপোজাল, পিএসপি হয়ে গেল পাটিসাপ্টা পিঠা-প্রযুক্তির শব্দগুলো নিয়ে এমন রসিকতা বইয়ের পরতে পরতে। লেখক প্রযুক্তির মূল রস যেমন ধরেছেন, তেমনি চারপাশের রঙ্গ-ব্যঙ্গকেও তুলে ধরতে পেরেছেন। অর্থ-ব্যাখ্যায় ১৮২টি ডিজিটাল শব্দকে যুগোপযোগী করে তোলা হয়েছে সব ধরনের পাঠকের কাছে। বইটিকে অভিধান বলা যায়। ডিজিটাল প্রযুক্তির বইও বলা যায়। তবে এটি রম্য বই, রঙ্গ-ব্যঙ্গই মূল উদ্দেশ্য। এই তিনের মিশেলে গ্রন্থ বাংলাভাষা এমনকি পৃথিবীর যেকোনো ভাষাতেই বিরল।
মুখবন্ধ পল্লব মোহাইমেন সংক্ষেপে পিএম। তাঁর বন্ধু-বান্ধবেরা তাঁকে পিএম বলেই ডাকে। কিন্তু পিএম মানে কী? সারা পৃথিবীতে পিএম মানে পোস্ট মেরিডিয়েম, দুপুর ১২টার পর; বাংলাদেশে প্রাইম মিনিস্টার, আবার ফিলিপ মরিসও হতে পারে। কিন্তু তাঁর বন্ধু-বান্ধবদের কাছে পিএম মানে পল্লব মোহাইমেন। পল্লব মোহাইমেন আসলে একটা বিস্ময়ের নাম। তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী, আমি অবাক হয়ে শুনি। পল্লব মোহাইমেন সরিষাবাড়ী থেকে এসে সরিষার মধ্যে থাকা ভূত তাড়াচ্ছেন। তিনি প্রথম আলোর আইটি-বিষয়ক পাতাগুলো দেখে থাকেন, ডেপুটি ফিচার এডিটর হিসেবে মডেলিং থেকে শুরু করে কুমড়া ফুলের বড়ি নিয়ে তাঁকে চর্চা করতে হয়। এরই ফাঁকে সদা সক্রিয় তাঁর রসবোধ। খুব চমৎকার সব রসিকতা করে তিনি আমাদের মাতিয়ে রাখেন। তিনি আমাদের অফিসের একমাত্র স্বঘোষিত ঘিরিঙ্গি। তিনি একটা ডিকশনারি লিখেছেন। আইটি-বিষয়ক শব্দগুলোর রম্য ব্যাখ্যা। মাউস মানে তাঁর কাছে কিলিকবাজ ইঁদুর, এফ এম মানে ফিরিঙ্গি মডিউল। রসিকতা যত সূক্ষ হয় ততই উত্তম। পল্লব মোহাইমেন সূক্ষ¥ রসিকতা করতে পারেন, তাঁকে দেখার পর এবং এই বই পড়ার পর সেটাও আমাদের বিশ্বাস করতে হলো। আনিসুল হক
লেখকের কথা ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েই শুরু। প্রায়ই আমার মনে হয় কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ফেসবকু, গুগল-এগুলোর জন্ম যদি বাংলাদেশে হতো তবে এগুলোর নাম কী হতো, অর্থই বা কী দাঁড়াত। জন্ম হোক যথাতথা কর্ম হোক ভালো। তাই তথ্যপ্রযুক্তির নানান উদ্ভাবন, আবিষ্কার আজ আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবেই জড়িত। ডিজিটাল প্রযুক্তির বিভিন্ন শব্দের অর্থ, বিভিন্ন প্রযুক্তির কাজের ধারার সঙ্গে আমাদের অনেক কিছুরই মিল খুঁজে পাই। এ ভাবনা থেকে ১০টি ডিজিটাল শব্দের ব্যঙ্গাÍক অর্থ ও সংজ্ঞা দিয়ে দুই দিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিই ‘জš§ তব যদি বঙ্গে’ শিরোনামে। কিছুদিন পর প্রথম আলোর সোমবারের ক্রোড়পত্র ‘রস আলো’র মাহফুজ রহমান আমাকে বলেন, ‘আপনার স্ট্যাটাসগুলো দেন তো, ছাপব।’ এরপর ধারাবাহিকভাবে ২৫-৩০টা শব্দার্থ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় রস আলোতে। তখনই মাথায় আসে বই লেখার পরিকল্পনা। এগিয়ে আসেন শুভ্র প্রকাশের রতন। শব্দার্থের সঙ্গে অলংকরণ করে দিতে রাজি হন শিখা। তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। পাণ্ডুলিপি পড়ে বন্ধু আহমেদ হাসান, সহকর্মী মুনির হাসান নানা রকম পরামর্শ দিয়েছেন, কৃতজ্ঞতা তাঁদের প্রতি। এ বইতে আমি চেষ্টা করেছি ডিজিটাল শব্দগুলোর প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য ধারণ করে সমসাময়িক বা আমাদের বিষয়ের সঙ্গে মিলিয়ে রম্য-ব্যঙ্গ অর্থ ও ব্যাখ্যা দেওয়ার। একে এক ধরনের ‘লোকালাইজেশন’ বলা যেতে পারে। প্রযুক্তির কথাবার্তা সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য। কিন্তু ডিজিটাল যুগে প্রতিদিনই মানুষ থাকছে প্রযুক্তির সঙ্গে। তাই মানুষের কাছে আসলে প্রযুক্তি কিন্তু মজার এক বিষয়ই বটে। সচিত্র ডিজিটাল ব্যঙ্গ অভিধান সে ধরনের একটি প্রয়াসমাত্র।
লেখকের জীবনী পল্লব মোহাইমেন জন্ম: ৩০ অক্টোবর ১৯৭০, রংপুর মাতৃসদন। মাত্র ৫০ দিন বয়সে বাবার কর্মস্থল জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে চলে আসা। সেখানেই বেড়ে ওঠা। বাবা মুহ. আব্দুল মান্নান সরিষাবাড়ী কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান, মা সুফিয়া চৌধুরী গৃহিণী। পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েও পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন সাংবাদিকতা। পড়াশোনা করেছেন সরিষাবাড়ী কেজি স্কুল, সরিষাবাড়ী আর ডি এম পাইলট হাইস্কুল, সরিষাবাড়ী কলেজ ও ঢাকা কলেজে। সাংবাদিকতার শুরু ১৯৯১ সালে সাপ্তাহিক প্রিয় প্রজন্ম-এ। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ কম্পিউটার টেকনিশিয়ান ও গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে পেশাদার কাজ। আজন্ম টানে আবার ফিরে আসা সাংবাদিকতায়। ১৯৯৬ সালে মাসিক কমপিউটার বিচিত্রায় তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিকতার শুরু। মাঝখানে দেড় বছর পাক্ষিক আনন্দভুবন। বর্তমান কর্মস্থল প্রথম আলোতে যোগ দেন ১৯৯৮ সালে, পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠালগ্নে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আছেন প্রথম আলোর ফিচার বিভাগে। দৈনিক পত্রিকায় প্রতিদিন তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক আলাদা বিভাগ প্রকাশের যে জনপ্রিয় ধারাটি এখন প্রচলিত সেই ধারার পথিকৃৎ হিসেবে পল্লব মোহাইমেনকে গণ্য করা হয়। সাংবাদিকতার বিভিন্ন শাখায় নিজের লেখনীর প্রমাণ দিয়েছেন। তথ্যপ্রযুক্তি, ফ্যাশন, জীবনযাপন, সম্পর্ক, ভ্রমণ-বিচিত্র বিষয়ে লিখছেন নিয়মিত। শখ: ছবি তোলা, বেড়ানো, মাছ ধরা, ম্যাগাজিন পড়া ও মোবাইল গেমস। পেশাগত কারণে বেশ কটি দেশ ঘুরেছেন। বৃশ্চিক রাশির জাতক পল্লব মোহাইমেন বিবাহিত, স্ত্রী মাহমুদা মালেক। তাঁদের দুই সন্তান মনন মাহমুদ সার্থক ও মেয়ে মহিমা স্বাগতা। সচিত্র ডিজিটাল ব্যঙ্গ অভিধান তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ।