ভূমিকা ৬ মার্চ ২০১৩ সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ জাতীয় সংসদকে জানান যে বাংলা ভাষা ছাড়াও দেশে আরও ৩৭ ভাষাভাষীর নাগরিক রয়েছে। নিবিড় গণনায় এই সংখ্যা কিছু বৃদ্ধি পেতে পারে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের বদৌলতে দেশেল বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে স্ব-স্ব ভাষার প্রতি দরদ ও মমতা বৃদ্ধি পয়েছে। যেসব ভাষায় বর্ণমালা নেই, সেই ভাষাগুলোতেও বাংলা হরফ ব্যবহার করে প্রাথমিক শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে সরকার ও কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় সব ভাষাগোষ্ঠীর কিছু কবিতা বা ছড়া এই গ্রন্থে সংযোজিত হয়েছে। এ ধরনের সংকলন হয়তো এই প্রথম। দেশের মাটি, মানুষ, ভাষা ও প্রকৃতি কীভাবে বিভিন্ন ভাষায় প্রতিফলিত হয়েছে তার মধ্যে আদান-প্রদান বৃদ্ধিকল্পে এবং বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ যেন পরস্পরকে সঙ্গদানে ও মতবিনিময়ে স্বকীয় সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সত্ত্বেও এক দেশবাসী হয়ে একাত্মবোধ করতে পারে, এমন আশা থেকে এই সংকলনের উদ্যোগ। এ গ্রন্থে বাংলাদেশের প্রধান প্রধান ভাষা ছাড়াও কিছু কিছু ভাষার উল্লেখ করেছি, যেগুলো মৌখিকভাবে চালু আছে। যেসব ভাষার বর্ণ মালা নেই, সেসব ভাষাও বাংলা হরফে লেখা হচ্ছে। ‘একুশে ফেব্রুয়ারি সকল ভাষার কথা কয়’-এই বিশ্বাসেই এ গ্রন্থের প্রণোদনা ও স্ফুর্তি । এই লেখাগুলো ২০১৩ সালের পয়লা থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোয় ধারাবাহিকভাবে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশিত হয়। এ্ক্ষণে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বিবেচনা করা হলো। এই গ্রন্থের জন্য নানাভাবে সাহায্য করেছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক সৌরেন বিশ্বাস, অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ, অধ্যাপক স্বপন নাথ, ফিলিপ গাইন, পাভেল পার্থ , মং মং চাক, এ কে শেরাম, উজ্জ্বল আজিম, মোহাম্মদ হাসান, তৈমুর রেজা এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরফি ও কবি জাফর আহমদ রাশেদ। এই গ্রন্থে যেসব কবির কবিতা উদ্ধৃত করা হয়েছে তাঁদের খিং রিয়ান, জগৎজোতি চাকমা, নন্দরানী মিন্জ, ফুয়াত লেথ থুলুক, মতেন্দ্র মানখিন, রনজিত সিংহ, রুশ পতাম এবং সিং ইয়াং ম্রো-কে অশেষ ধন্যবাদ। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সূচিপত্র *বাংলাদেশের নানান ভাষা *আরবি *ইংরেজি *উর্দু *ককবরক *খাসি *গারো *চাক *চাকমা *তঞ্চঙ্গ্যা *পালি *ফারসি *বম *বাংলা *বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি *মারমা *মৈ তৈ মণিপুরি *ম্রো *রাখাইন *সংস্কৃতি *সাঁওতালি *অন্যান্য ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ভাষা *উপসংহার *নির্ঘণ্ট
বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বাংলাদেশের একজন অন্যতম শিক্ষাবিদ, আইনজীবী ও বিচারক। ১৯২৮ সালের ৩ ডিসেম্বর ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৌলভী মুহাম্মদ জহির উদ্দীন ছিলেন একজন রাজনৈতিক কর্মী এবং আইনজীবী। শৈশব থেকেই রাজনৈতিক বিষয়াদি ও সংস্কৃতির দিকে তাঁর ঝোঁক ছিল। ১৯৪৭ এ দেশভাগের পর তাঁরা তৎকালীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও পরবর্তীতে রাজশাহীতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে বি.এ. (সম্মান) এবং ১৯৫১ সালে এম.এ. পাস করেন। এরপর ১৯৫৮ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তাঁর কর্মজীবনের শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক পদে যোগ দিয়ে। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকা হাইকোর্ট বারে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়ের। সহকারী এডভোকেট জেনারেল, হাইকোর্টের ভাইস প্রেসিডেন্টসহ অন্যান্য পদে দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৭৬ সালে তিনি হাইকোর্টের বিচারপতি হন। ১৯৮৫ সালে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালীন তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান একাধারে একজন আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষক, রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ এবং অভিধানপ্রণেতা। তিনি একজন ভাষা সৈনিক; ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এর বই সমূহ ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগেরই বহিঃপ্রকাশ। তিনি উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা প্রবর্তনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের বই সমূহ হলো ‘রবীন্দ্র সম্বন্ধে সঞ্জনা ও পার্থক্য বিচার (১৯৬৮)’, ‘যথা-শব্দ (১৯৭৪)’, ‘কোরআন সূত্র (১৯৮৪)’, ‘ভাষার আপন পর (২০১২)’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত প্রবন্ধগ্রন্থের সংখ্যা ৪০টি। সাহিত্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কৃতিত্বের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (১৯৮৪), একুশে পদক (২০০৭) সহ আরো বেশ কিছু সম্মাননায় ভূষিত হন। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এর বই সমগ্র পাঠকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।