ভূমিকা মহান রুশ লেখক গোর্কির (১৮৬৮-১৯৩৬) খ্যাতি প্রধান তাঁর মা উপন্যাসটির জন্য। পৃথিবীর শতাধিক ভাষায় অনূদিত হয়ে বইটি এ-যাবত কোটি-কোটি মানুষ পাঠ করেছেন। ১৯০৫ সালের প্রথম রুশ-বিপ্লব পূর্ববর্তী রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের পটভূমিকায় উপন্যাসটি লেখা হয়েছিল। লেনিন বইটিকে অভিহিত করেছিলেন ‘একটি দরকারি’ এবং ‘খুবই যুগোপযোগী’ বই বলে। ১৯১৭ সালের সোভিয়েত বিপ্লবের পেছনেও বইটি একটি অনুপ্রেরণাদায়ী ভূমকা পালন করে। পরবর্তীকালেও সারা পৃথিবীর বিশেষ করে সমাজ-পরিবর্তন-আকাঙ্ক্ষী রাজনৈতিক কর্মীদের কাছে এটি একটি অবশ্য-পাঠ্য গ্রন্থ হিসেবে গণ্য হয়ে এসেছে। শুধু ঐপন্যাসিক হিসেবেই নয়, গল্প ও নাটক রচনায়ও গোর্কি কৃতিত্বের পরিচয় দিযেছেন। তাঁর বিখ্যাত গল্পের মধ্যে ‘মানুষের জন্ম’ (১৮৯২), ‘বুড়ি ইজেরগিল’ (১৮৯৪), ‘চেলকাশ’ (১৮৯৪), ‘ছাব্বিশজন পুরুষ ও একটি মেয়ে’ (১৮৯৯) প্রভৃতি। এছাড়া লিখেছেন নাটক তলদেশে (১৯০২), পাতিবুর্জোয়া (১৯০২), মরগুমি লোক (১৯০৪) বুড়ো (১৯১২) ইত্যাদি।জনপ্রিয়তার দিক থেকে মা শীর্ষস্থান দখল করলেও, অনেক সমালোচক মনে করেন, তাঁর তিনখণ্ড আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস আমার ছেলেবেলা (১৯১৪), পৃথিবীর পথে (১৯১৫) ও পৃথিবীর পাঠশালায় (১৯২৩) এবং মহাকাব্যোপম উপন্যাস ক্লিম সামগিনের জীবন (১৯২৭-৩৬) অধিকতর শিল্প-সফল রচনা। বুর্জোয়া বা মধ্যবিত্ত জীবনের নানা স্ববিরোধ, অন্তসারশূন্যতা, ভণ্ডামি, তথাকথিত নীতিবাগীশতার আড়ালে তার গভীর ক্লেদ-এসবকে শুধু উদ্ঘাটনাই নয়; তীব্র বাক্যবাণে বিদ্ধ করেছেন গোর্কি তাঁর বিভিন্ন রচনায়, বিশেষ করে তলদেশে-র মতো নাটক এবং ক্লিম সামগিনের জীবন-এর মতো উপন্যাসে।মানুষকে তিনি দেখেছেন গভীর মমতায়। বলেছেন, “মানুষ-কী দৃপ্ত কথাটার ঝংকার!” (তলদেশে) মানবজাতির জন্য এক নতুন, শোষণ-বঞ্চনামুক্ত ও সমতায় বিশ্বাসী ভবিষ্যৎ রচনার সংগ্রামে তিনি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। শুধু আপন রুশ দেশেরই নয়, সারা পৃথিবীর মেহনতি মানুষের বিপ্লবী অভিযাত্রার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন।
(মার্চ ২৮, ১৮৬৮ – জুন ১৮, ১৯৩৬) বিখ্যাত রুশ সাহিত্যক। তিনি নিজেই তার সাহিত্যক ছদ্মনাম হেসেবে বেছে নেন 'গোর্কি' অর্থাৎ 'তেতো' নামকে। তার অনেক বিখ্যাত রচনার মধ্যে মা একটি কালজয়ী উপন্যাস। প্রথম জীবন মাক্সিম গোর্কি নিঞ্জি নভগরদ এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৯ বছর বয়সে পিতৃমাতৃহীন হন। ১৮৮০ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি তার দাদীমাকে খুঁজতে গৃহ ত্যাগ করেন। ১৮৮৭ সালে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যান এবং দীর্ঘ ৫ বছর ধরে পায়ে হেঁটে সমগ্র রাশিয়া ভ্রমন করেন। তিনি ১৮ জুন ১৯৩৬ (৬৮ বছর) সালে মৃত্যু বরণ করেন।