"মেকু কাহিনী"বইটির প্রথমের কিছু অংশ: কী হল ব্যাপারটা মেকু ঠিক বুঝতে পারল না—প্রথমে , টানা হ্যাচড়া চিকার হইচই তারপর হঠাৎ করে মনে হল কেউ যেন কুসুম কুসুম গরমের আরামের একটা জায়গা, থেকে তাকে টেনে ঠাণ্ডা একটা ঘরে এনে ফেলে দিল। মেকু গলা ফাটিয়ে একটা চিল্কার দেবে কি না চিন্তা করল। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক ভদ্রতা হবে না বলে মাড়িতে মাড়ি চেপে পুরাে যন্ত্রণাটা সহ্য করে অপেক্ষা করতে থাকে। আশেপাশে কিছু উত্তেজিত গলা শােনা যেতে থাকে—মানুষগুলাে কী নিয়ে এরকম খেপে গেছে দেখার জন্যে মেকু খুব সাবধানে চোখ খুলে তাকাতেই প্রচণ্ড আলােতে তার চোখ ধাধিয়ে গেল। মেকু তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করল, কী সর্বনাশ! এত আলাে কোথা থেকে এসেছে? | চারপাশের লােকজন এখনাে খুব চেঁচামেচি করছে, মনে হচ্ছে কিছু একটা নিয়ে ভয় পেয়েছে। কী নিয়ে ভয় পেয়েছে কে জানে। মেকু শুনল কেউ একজন বলল, “কী হল? বাচ্চা কাঁদে না কেন?” কোন বাচ্চার কথা বলছে কে জানে! বাচ্চা কান্নাকাটি না করাই তাে ভালাে, এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কী আছে? কোন বাচ্চা কাঁদছে না মেকু সেটা চোখ খুলে একবার দেখবে কি না ভাবল কিন্তু চোখ ধাঁধানাে আলাের কথা চিন্তা করে আর সাহস পেল না। শুনতে পেল ভয় পাওয়া গলায় মানুষটা আবার বলল, “সর্বনাশ! বাচ্চা যে এখনাে কাছে না!” | মােটা গলায় একজন বলল, “বাচ্চাটাকে উলটো করে ধরে পাছায় জোরে থাবা দাও।” কোন বাচ্চার কপালে এই দুর্গতি আছে কে জানে। ছােট একটা বাচ্চাকে উলটো করে ধরে তার পাছায় থাবা দিয়ে কাঁদিয়ে দেয়া কোন দেশী ভদ্রতা? এরা কি ধরনের মানুষ? মেকু চোখ খুলে এই বেয়াদপ মানুষগুলােকে এক নজর ন্টদেখবে কী না ভাবল, তার আগেই হঠাৎ করে কে যেন তার দুই পা ধরে তাকে চ্যাং দোলা করে উপরে তুলে ফেলল। তারপর উলটো করে ঝুলিয়ে কিছু বােঝার আগেই প্রচণ্ড জোরে তার পাছায় একটা ভয়াবহ থাবড়া মেরে বসে। মেকুর মনে হল শুধু তার পাছা নয় শরীরের হাড়, মাংস, চামড়া সবকিছু চিড়বিড় করে জ্বলে। উঠেছে।
বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী পাঠকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি মূলত এ দেশের একজন বিখ্যাত লেখক, পদার্থবিদ এবং শিক্ষাবিদ। কিশোর সাহিত্য, শিশুতোষ গ্রন্থ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, গণিত বিষয়ক বই এর জন্য খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবা ফয়জুর রহমানের চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলাতেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডি ডিগ্রী অজর্নের উদ্দেশ্যে স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিএইচডি সম্পন্ন করে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ ল্যাবেও গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সবসময়ই এ দেশের কিশোর-কিশোরীদের কাছে বিশেষ আবেদন নিয়ে হাজির হয়েছে। কিশোর সাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ক অজস্র গ্রন্থ দিয়ে তিনি আলোকিত করে তুলেছেন এদেশের অগণিত কিশোর-কিশোরীর মনোজগত। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমূহ, যেমন- দীপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ, আমি তপু, শান্তা পরিবার, দস্যি ক’জন ইত্যাদি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। তার বেশ কিছু গল্প পরবর্তীতে নাটক ও চলচ্চিত্র হিসেবে টিভি পর্দায় স্থান করে নিয়েছে। তিনি একজন বিশিষ্ট কলামিস্টও। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডও তাঁর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমগ্র সকল বইপড়ুয়াকেই আকৃষ্ট করে। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বহুবার পুরষ্কৃত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (২০০৪) এবং শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (২০০৫) সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক (২০০২), শেলটেক সাহিত্য পদক (২০০৩), ইউরো শিশুসাহিত্য পদকসহ (২০০৪) অগণিত পুরষ্কার অর্জন করেছেন গুণী এই সাহিত্যিক।