"ট্রেজার অভ দ্য লেক"বইটির মুখবন্ধ: মােনল্যাণ্ড যাওয়ার চিন্তা কেন মাথায় চেপেছিল সে কথা মূল গল্পের কোথাও বলেছি বলে মনে করতে পারছি না। তাই অল্প দুয়েক কথায় সেটা এখানে সেরে নিচ্ছি। ধর্মীয় ব্যাপারে বরাবরই আমার ধ্যান ধারণা একটু ভিন্ন। কিন্তু তা সত্ত্বেও নেটালের একটা মনাস্ট্রির দরজা সবসময়ই আমার জন্য ছিল ভােলা। ব্রাদার এমব্রোস নামে একজন সন্ন্যাসী ছিলেন সেখানে। তার আসল নাম বলতে পারব না। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিদ্বান লােক। তবে জুলুদের ভাষায় তিনি “নীচে চলে গেছেন” (অর্থাৎ মারা গেছেন)। ধর্ম ও আত্মা সম্বন্ধে আমার চিন্তা-ভাবনা তাঁর ভালই জানা ছিল। তারপরও তিনি আমাকে যথেষ্ট সম্মান করতেন। জন্ম[ত্রে তিনি ছিলেন সুইডিশ নাগরিক। পেশায় ছিলেন একই সাথে প্রত্নতত্ত্ববিদ ও নৃতত্ত্ববিদ। এ দুই বিষয়ে ব্যাপক বিশ্লেষণধর্মী বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। বুশম্যানদের আঁকা ছবির ওপর তার ছিল অগাধ জ্ঞান। পূর্ব, দক্ষিণ ও মধ্য-দক্ষিণ আফ্রিকার অধিবাসীদের ইতিহাস, ধর্ম, আচার ও ঐতিহ্য সম্বন্ধেও তাঁর জ্ঞান ছিল আমার চেয়ে ঢের বেশি। এসব ব্যাপারে আমাদের মতের মিলও ছিল অনেক। ফলে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রায়ই আমরা দেখা করতাম। দেখা করতে না পারলে, চেষ্টা করতাম চিঠি দিয়ে হলেও পরস্পরের সাথে যােগাযােগ রাখতে। ট্রেজার অভ দ্য লেক।
ভাইয়ের সাথে বাজি ধরে অ্যাডভেঞ্চার কাহিনী লেখা শুরু করার পর যিনি শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সেরা দুঃসাহসিক ও রোমাঞ্চকর গল্পের স্রষ্টা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন তিনি হলেন স্যার হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড। কম বয়সে চাকরিসূত্রে তিনি আফ্রিকা চলে যান এবং সে অঞ্চলের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ান, যার ফলে আফ্রিকা মহাদেশের নানা জানা-অজানা বিষয় সম্পর্কে তিনি প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেন এবং এই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে ব্যবহার করেন তার রোমাঞ্চকর অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস ও গল্পসমূহ রচনায়। দশ ভাই-বোনের মধ্যে অষ্টম হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড জন্মগ্রহণ করেন ১৮৫৬ সালের ২২ জুন, ইংল্যান্ডের নরফোকে। খুব অল্প বয়সেই কর্মজীবন শুরু হয়ে যায় পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে। মাত্র উনিশ বছর বয়সেই তাঁকে চাকরিসূত্রে পাড়ি জমাতে হয় আফ্রিকায়। সেখান থেকে ৬ বছর পর ফিরে এসে তিনি আইনশাস্ত্রে পড়াশোনা শুরুর পাশাপাশি সাহিত্যে মনোনিবেশ করেন এবং তাঁর জাদুকরী লেখনীর মাধ্যমে সৃষ্টি হতে থাকে 'সলোমন'স মাইনস্', 'শী', 'অ্যালান কোয়াটারমেইন' এর মতো অমর সকল দুঃসাহসিক ও রোমাঞ্চকর কাহিনীর। হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড এর বই সমূহ যুগে যুগে অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় পাঠকদের দিয়ে গিয়েছে নানা বিচিত্র কল্পকাহিনীর এক অনন্য অভিজ্ঞতা, যার মূলে রয়েছে 'আমস্লোপোগাস', 'রিলিজিয়ন', 'অ্যালান কোয়াটারমেইন', 'শী' ইত্যাদি বিখ্যাত সিরিজ। হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'ক্লিওপেট্রা', 'মন্টেজুমা'স ডটার', 'লিসবেথ', 'কুইন অফ দ্য ডন', 'ভার্জিন অফ দ্য সান', 'দ্য ঘোস্ট কিংস', 'মেরি', 'দ্য ট্রেজার অফ দ্য লেক', 'রেড ইভ' ইত্যাদিও উল্লেখযোগ্য। তাঁর বেশ কিছু বই বাংলাদেশি পাঠকদের সুবিধার জন্য অনূদিত হয়েছে বাংলা ভাষায়। বাংলা ভাষায় অনূদিত হেনরি রাইডার হ্যগার্ড এর অনুবাদ বই এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো 'শী', 'রিটার্ন অফ শী', 'দ্য ইয়েলো গড', 'দ্য ঘোস্ট কিংস', 'কিং সলোমন'স মাইনস', 'মন্টেজুমা'স ডটার', 'অ্যালান অ্যান্ড দ্য হোলি ফ্লাওয়ার', 'মার্গারেট', 'দ্য পিপল অফ দ্য মিস্ট' ইত্যাদি। এই খ্যাতিমান কাহিনীকার ১৯২৫ সালের ১৪ মে ৬৮ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন। এর পূর্বে তিনি ১৯১২ সালে ইংরেজ রাজপরিবারের পক্ষ থেকে 'নাইটহুড' উপাধি লাভ করেন।