ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা কথাশিল্পী আল মাহমুদ উপন্যাস রচনা শুরু করেন তাঁর কবিখ্যাতির মধ্যবয়সে। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে ‘গণকণ্ঠ’ নামক একটি দৈনিকের সম্পাদক হিসেবে তিনি কিছু ছোটগল্প লিখে সৃজনশীল গদ্য রচনার সূচনা করেন। তার ‘পানকৌড়ির রক্ত’ বইটি প্রকাশিত হলে তিনি কথাশিল্পী হিসেবে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন। কবি জসিম উদ্দীনের মতো বয়োবৃদ্ধ প্রবীণ কবিরাও তখন আল মাহমুদকে গদ্য রচনার জন্য চিঠি লিখে উৎসাহ দিয়েছিলেন। আল মাহমুদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের একটি প্রাচীন মুসলিম পরিবারে ১১ জুলাই ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলের সপ্তম শ্রেণীতে সপ্তম শ্রেণীতে থাকতেই তাঁর লেখালেখি শুরু। ‘৪৭-এর বিভাগ পরবর্তীকালে কলকাতায় সত্যযুগ পত্রিকায় একটি গল্প দিয়ে তাঁর সাহিত্যজীবন আরম্ভ। ১৯৫৬-এ এসে কলকাতায় প্রায় সবগুলো খ্যাতিমান পত্রপত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশ পেতে থাকে। স্বাভাবিক কবিখ্যাতির প্রলোভন তিনি সবকিছু ছেড়ে কবিতা রচনার দিকেই অধিক মনোযোগ দিলেও তাঁর গদ্য লেখার স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষমতার কথা সবসময়ই তাঁর বন্ধু সমালোচকগণ তাঁকে স্বরণ করিয়ে দিয়েছে। সূচিপত্র *মরু মুষিকের উপত্যকা *মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) *পাখির কাছে ফুলের কাছে *একটি পাখি লেজ ঝোলা
বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবিদের একজন আল মাহমুদের কবিতার বই পড়েননি এমন সাহিত্যপ্রেমী খুঁজে পাওয়া ভার। গুণী এই কবি একাধারে একজন সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে তার কবি পরিচয়। আধুনিক বাংলা কবিতা নানা দিক থেকে তার কাছে ঋণী থাকবে। বাচনভঙ্গি আর রচনাশৈলীতে তার কবিতা সমকালীন যেকোনো কবির তুলনায় অনন্য। ‘কবিতাসমগ্র’ (দুই খন্ড) ‘উড়ালকাব্য’, ‘সোনালি কাবিন’, ‘আল মাহমুদের স্বাধীনতার কবিতা’, ‘প্রেমের কবিতা সমগ্র’, ‘আল মাহমুদের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ ইত্যাদি কবিতার বই নিয়ে আল মাহমুদ কবিতাসমগ্র। এছাড়াও আল মাহমুদ উপন্যাস সমগ্র প্রকাশিত হয়েছে তিন খণ্ডে। জাতীয় রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক টানাপোড়েন, স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমি ও প্রেক্ষাপটসহ সমাজ ও ব্যক্তি জীবনের দ্বন্দ্ব স্থান পেয়েছে আল মাহমুদ এর বই সমূহ-তে। ‘কালের কলম’, ‘লোক লোকান্তর’, ‘মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো’, ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’, ‘আরব্য রজনীর রাজহাঁস’, ‘গল্প সমগ্র’, ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য লেখা। আল মাহমুদের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে। তার পুরো নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। শিক্ষাজীবনেই তিনি লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত হন। রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল আর মধ্যযুগের বৈষ্ণব পদাবলী পাঠ করতে করতে নিজের কবি প্রতিভা আবিষ্কার করেন তিনি। ১৯৫৪ সালে সাপ্তাহিক কাফেলা পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। কিছুকাল পরই এ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। পুরো ৬০-এর দশক জুড়ে তিনি অসংখ্য কবিতা রচনা করেন এবং কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও খ্যাতি লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি প্রবাসী সরকারের হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ পত্রিকায় সরকার বিরোধী লেখালেখির কারণে এক বছরের জন্য কারাদণ্ডও ভোগ করতে হয় তাকে। ১৯৭৫-৯৩ সাল পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে কাজ করে কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কবি আল মাহমুদ তার অনবদ্য রচনাশৈলীর জন্য ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’, ‘একুশে পদক’, ‘জীবনানন্দ স্মৃতি পুরস্কার’, ‘নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক’ সহ অসংখ্য পদক ও সম্মাননা লাভ করেছেন। ২০১৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি তিনি পরলোকগমন করেন।