"ব্যাংকিং সংস্কার ও ব্যবস্থাপনা"বইটির প্রথম ফ্লাপের কিছু কথা: ব্যাংকিং বা বৃহত্তর অর্থে আর্থিক খাতের বিরাজমান সমস্যাগুলাে আমাদের কমবেশি বিচলিতও করে। তবে সেটা হয় মাইক্রো লেভেলে। বৃহত্তর প্রেক্ষিত থেকে। বিষয়টাকে আমরা কমই দেখি। যদিও সমস্যার সমাধান বা সংকটমােচনের জন্য সেটা খুবই জরুরি। বিষয়বিশেষজ্ঞরা এ-বিষয়ে তাঁদের নিজস্ব চৌহদ্দিতে যে-সব আলােচান বা মতবিনিময় করেন স্বাভাবিকভাবেই তা । সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায়। এ পটভূমিতে হাতে-গােনা যে-কয়েকজন বিশেষজ্ঞ এদেশে সংবাদপত্রের পাতায় সাধারণ পাঠকের উপযােগী করে। ব্যাংকিং তথা আর্থিক খাতের সমস্যা ও সংস্কারের মতাে গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু জটিল বিষয়ে লেখালেখি ও মত প্রকাশ করে আসছেন খন্দোকার ইব্রাহিম খালেদ তাদের অন্যতম। জনাব ইব্রাহিম খালেদ আমাদের দেশের একজন প্রবীণ ও শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকার। পেশাগত দায়িত্ব পালনের অতিরিক্ত তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই ক্ষেত্রে গবেষণা ও চিন্তাচর্চা করে আসছেন। আর্থিক খাত সংস্কারের উদ্দেশ্যে এ যাবত গৃহীত নানা সরকারি বা । প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন ও আছেন। সেদিক থেকে ব্যাংকিং তথা আর্থিক খাত সম্পর্কে তাঁর মতামতসমূহ এমনিতেই বিশেষ মনােযােগ দাবি করে। বর্তমান প্রবন্ধ-পুস্তকটি তাঁর সে-রকম কিছু মূল্যবান প্রবন্ধ বা মতামতের সংকলন। প্রাক-স্বাধীনতা। আমল থেকে তাঁর দীর্ঘ ব্যাংকার জীবনের কিছু তাৎপর্যপূর্ণ অভিজ্ঞতার কথাও লিপিবদ্ধ হয়েছে গ্রন্থভুক্ত কয়েকটি প্রবন্ধে। ইতিপূর্বে সংবাদপত্রে প্রকাশের সময়ই এ-লেখাগুলাে সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। একজন মুক্তচিন্তার স্পষ্টবাদী মানুষ হিসেবে তাঁকে সর্বমহলে পরিচিত করে তােলে। অর্থনীতি ছাড়াও সন্ত্রাস, নৈতিকতা, ঐতিহ্য-সচেতনতা ইত্যাদি বিষয়েও কয়েকটি রচনায় তিনি মত ব্যক্ত করেছেন। যা একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে তাঁর পরিচয়কেই পাঠকের কাছে আরও উজ্জ্বল করে তুলবে।
খােন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ১৯৪১ সনের ৪ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। গােপালগঞ্জ মডেল হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট, ঢাকা বিশ্বদ্যিালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পরবর্তীতে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে নবপ্রতিষ্ঠিত ইনষ্টিটিউট অব বিজনেস এডমিনিষ্ট্রেশন থেকে এম,বি,এ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৩ সনে তল্কালিন হাবিব ব্যাংকে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। তিনি বাংলাদেশ ইনষ্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের প্রথম ফ্যাকাল্টি সদস্য এবং পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের প্রথম মহাব্যবস্থাপক ছিলেন । তিনি সােনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এবং পূবালী ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছিলেন। ২০০০ সনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে সরকারী দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করেন । ২০০৮ সনে তিনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৯০ সনে অন্তবর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত আর্থিক খাত সংস্কার বিষয়ক টাস্কফোর্সের সদস্য, ২০০১ সনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ কর্তৃক গঠিত অনুরূপ টাস্কফোর্সের উপপ্রধান এবং ১৯৯৭ সনে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গঠিত ‘ব্যাংকিং সেক্টরে ট্রেড ইউনিয়নের কার্যকলাপ’ বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া যৌথ উদ্যোগে গঠিত হজ ফিনান্স কোম্পানীর নির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান, গবেষণা ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয়- এর এমিরিটাস ফেলাে, । বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির আজীবন সদস্য ও প্রাক্তন সহ-সভাপতি, গ্রীন ইউনিভার্সিটির সিন্ডিকেট সদস্য, বাংলাদেশ সােসাইটি ফর ট্রেনিং এন্ড ডেভেলপমেন্টের মহাসচিব এবং বাংলাদেশ এম,বি,এ এসােসিয়েশনের আজীবন সদস্য ও প্রাক্তন সভাপতি। এছাড়া তিনি। ঐতিহ্যবাহী শিশু-কিশাের প্রতিষ্ঠান কচি-কাঁচার মেলার কেন্দ্রীয় পরিচালক। তিনি একজন আর্থ- সামাজিক বিশ্লেষক, কলামিষ্ট, টক শাে ব্যক্তিত্ব ও লেখক। তাঁর রচিত কিছু স্মৃতি কিছু কথা, “ফিরতে হবে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে’ এবং ব্যাংকিং সংস্কার ও ব্যবস্থাপনা’ পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে।