কড়ই গাছের খোড়লে বসে দুটি পেঁচা বেশ করুণ সুরে ডাকছে। সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় তাদের ডাকা ডাকি। ঘন আঁধার না হওয়া পর্যন্ত এ ডাক থামে না। কাক কালাে আঁধার নামলে পেঁচা দুটো খোড়ল থেকে মুখ বের করে ছােট ছােট চোখে তাকায়। আশপাশে কোথাও ফিঙে পাখি ওড়াউড়ি করতে দেখলে ওরা খোড়ল ছাড়ে না। ফিঙে পাখিরা পেঁচাদের দেখলে ধারালাে ঠোট দিয়ে মাথার ঘিলু বের করতে দেরি করে না। খোড়লে-পেঁচা ওদের থেকে সতর্ক। বিপদ তাে আর বলে কয়ে আসে না। পড়তে বসে জানালা দিয়ে তাকিয়ে পেঁচা দুটির প্যাচপ্যাচানি ডাক, থ্যাবড়া মুখের উঁকিঝুঁকি দেখতে মন্দ লাগে না। পাশের ঘরে দু’আঙুলের ফাকে জপমালা ঘােরাতে ঘােরাতে পেঁচা দুটিকে দোজখে পাঠান বড় দাদি। বড় দাদি আমার দাদার বড় ভাইয়ের বউ। বড় দাদির কথা ওরা কানেই শােনে না। আরাে জোরে কিচ্ কিচ্ করে গলা ফাটিয়ে ডাকে। বড় দাদির মেজাজ খারাপ হয়। জপমালা নামাজের বিছানায় রেখে দরজা খুলে বড় কাঁচের চশমার ফাঁক দিয়ে তাকান ঝাপসা চোখে। বুড়ির দু'চোখ অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখে না। পেঁচা দুটি একসময় খোড়ল ছাড়ে। আমার জানালার কাছে এসে ভুলকি মেরে ডানা মেলে খাবারের সন্ধানে। পেঁচা দুটির ডানার পটপট আওয়াজ বুড়ির কানে পৌঁছায়। বড় দাদির চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে গেলেও কান দুটি আছে বেশ। আবার দরজা খুলেন বুড়ি। মনে মনে জপ করেন কী যেন। বুকে থু থু দেন। ডাক দিয়ে বলেন, কিরে নাজু তুই কিছু শুনতে পাস না? ইয়া বড় দুটি অলক্ষ্মী উড়ে গেল ডানা মেলে। কী কড়া তাদের ডানার আওয়াজ। বড় দাদির কথার জবাব দেই না আমি। জানি, জবাব দিলে বুড়ি কথা বাড়াবে আরাে। লক্ষ্মী পেঁচা, হুতােম পেঁচা, ভুতােম পেঁচাদের তারিফ শােনাতে চাইবে। সন্ধ্যার সময় এত কথা শুনলে মাথা ঝিঝি করে। আমার কাছে খোড়লে-পেঁচা সবচেয়ে ভালাে, সন্ধ্যা বেলার সাথি। বকবক করে করে বুড়ি একসময় দরজা বন্ধ করেন। পুরাে পৃথিবী ততক্ষণে ছেয়ে যায় কালাে আঁধারে।