সবার মনের মধ্যেই একজন কবি মানুষ নিভৃতে বাস করে। হঠাৎ করেই কেউ কবিতা লেখে না। যে প্রকৃতি আর মানুষকে ভালোবাসে তার মনের মধ্যে অনিন্দ্য সুন্দর কিছু ভাবনা কাজ করতে থাকে। যে মানুষটি সেই ভাবনাগুলোকে ছন্দে শব্দে উপমা অলঙ্কারে ফুটিয়ে তোলেন তিনিই কবি। খন্দকার আলী আজম নিজের ভেতরের গোপনচারী কবি মানুষটিকে এতোকাল লুকিয়ে রেখেছিলেন। মাটি যেমন যত্নে যত্নে উর্বরা হয়ে ওঠে এই কবিও তেমনি নিজের ভেতরের সেই গোপন মানুষটিকে, একলা মানুষটিকে একটু একটু ভালোবেসে সবার সামনে এনে দাঁড় করালেন। তাঁর ভেতর থেকে দীর্ঘকাল লালিত সেই মুগ্ধ সরল কবি মানুষটি এবার মলাটবন্দী হল। এই কবি কেবল নিজের কথা বলেন না। দেশ আর মানুষের যন্ত্রণা কবি খন্দকার আলী আজমকে তাড়িত করেছে, তাঁর মনকে দগ্ধ করেছে সমাজের নানান অসঙ্গতি। নিজের গ্রামের সৌন্দর্য আর মানুষের পবিত্র ভালোবাসার কথা তিনি একে একে কবিতায় তুলে ধরেছেন। তিনি কবিতায় একই সঙ্গে দ্রোহী এবং প্রেমী। খন্দকার আলী আজমের কবিতায় নারী নানান রূপে আবির্ভূত হয়েছে। তাঁর কবিতায় বিচিত্র চরিত্র ও চিন্তার সমাবেশ ঘটেছে। প্রথম সকাল তাঁর প্রথম বই, প্রথম কবিতার বই। এই বই সবার কাছে আদর আর ভালোবাসা পাবে।
আলী আজম বাবলা নামে লেখালেখি। মূল নাম ড. খন্দকার আলী আজম। জন্ম ১৯৬১ সালের ৩ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি গ্রামে। শিক্ষা : কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন স্কুল, ঢাকা কলেজ, ঢাকা। বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা। কবি খন্দকার আলী আজম দৈনিক স্বাধীনমত’-এর সম্পাদক। তার কর্মময় জীবন শুরু হয় দক্ষিণ কোরিয়াতে ইয়াং ওয়ান কর্পোরেশনের ইলেক্ট্রিশিয়ান ম্যানেজার হিসেবে। এরপর সেখান থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে ফ্যাশন ডিজাইনে ডিপ্লোমা করেন এবং এক বছর ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে কাজ করেন। ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা থেকে অ্যারোনোটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় যোগ দেন এবং ২০০৮ সাল পর্যন্ত এখানেই তাঁর জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট রোমাঞ্চকর সময় পার করেন। এ বছরই তিনি ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা থেকে পর্যটন শিল্পের উপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। খন্দকার আলী আজম ছিলেন একজন সমাজসেবক। শুধু নিজের জেলাতেই নয়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে তাঁর নামে এবং তাঁর অর্থায়নে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। তিনি গরিব দুস্থদের পাশে বন্ধুর মতো সর্বদা উপস্থিত থাকতেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল মানুষের গুণগত মান উন্নয়ন এবং সুস্থ সুন্দর সমাজ গঠন। পারিবারিক জীবনে তিনি দুজন স্ত্রীর (নাসরিন ও ছবি) ঘরে পাঁচ সন্তানের (বৃষ্টি, মেঘলা, পৌলমী পূর্ণতা, নদী ও শ্রাবণ) জনক ছিলেন। ২০২০ সালের ১৩ এপ্রিল লেখক আলী আজম বাংলাদেশে মৃত্যুবরণ করেন।