মাত্র আটচল্লিশ পৃষ্ঠার একটি উপন্যাস! খুব দীর্ঘ কোনো কাহিনির বর্ণনা নেই। কিন্তু উপন্যাসের যে ঘটনা তার ব্যাপকতা, বিশালতা অনেক। গতানুগতিক উপন্যাসের বাইরে গিয়ে একটা অন্যরকম মানবিক ভালোবাসার পবিত্র প্রকাশ ঘটেছে এ উপন্যাসের মধ্যে। উপন্যাসের নামকরণের মধ্যেই এর একটা ঈঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে। স.ম. শামসুল আলম একজন ব্যতিক্রমী চিন্তার মানুষ। তার লেখার মধ্যেও এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। একজন লজিং মাস্টারের তার ছাত্রের বোনের সাথে সর্ম্পক তৈরি হয়। এটা খুব কমন একটা ঘটনা। কিন্তু অঘটনটা ঘটে অন্যভাবে। অর্থাৎ ছাত্র নাগিবের বোন এলিস একটি পঙ্গু মেয়ে। ছোটবেলায় টাইফয়েড জ্বরে তার দুটি পা শুকিয়ে অচল হয়ে যায়। ধনী বাবার ঘরে তার তেমন একটা সমস্যা হতো না। দুটি কাজের মেয়ে সব সময়ই তার দেখাশোনা করত। কিন্তু নিঃসঙ্গতা তাকে ঘিরে রাখত। নাগিবের মাস্টারকে এলিসও মাস্টার সাহেব ডাকত। মাস্টার সাহেবের সাথে তার ধীরে ধীরে একটা প্রেমময় সম্পর্ক তৈরি হয়। মাস্টার এলিসাকে বিয়ে করে। কিন্তু মাস্টার সাহেবের সাথে সুহিতারও একটা বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল, যেটা আরও এগুলে প্রেম, বিয়ে হতে পারত। সমাজ, পরিবার, ভবিষ্যৎ সব কিছুর চিন্তা দূরে ঢেলে মাস্টার সাহেব এলিসকে নিজের গ্রামে নিয়ে যায়। মাস্টার সাহেবের মা ছেলের এমন কাজ দেখে খুবই কষ্ট পান। গ্রামবাসীর বিষ্ময়, হাসাহাসি, ব্যঙ্গ বিদ্রæপের শেষ থাকে না। এসব মেনে নিয়ে এলিসকে ভালোবেসে সুখি রাখতে মাস্টার সাহেব সদা তৎপর। এ উপন্যাসটি পাঠ করতে করতে অশ্রæসিক্ত হতে হয়। প্রেমের যে মহৎ মাধুর্য তা অনুভব করা যায়।
স.ম. শামসুল আলম ১৯৬২ সালের ২৫ আগস্ট রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলাধীন শিকজান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম এস. এম. শাহজাহান আলী এবং মাতা সালেহা শাহজাহান। তিনি ১৯৭৯ সাল থেকে লেখালেখি শুরু করেন এবং একই বছরে ফরিদপুর জেলা পরিষদের মুখপত্র 'মাসিক গণমন'-এ প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। ১৯৮৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয় প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'হিংসার নক্ষত্র এক'। ১৯৯৪ সালে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই তাঁকে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার কার্যনির্বাহী পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করেন এবং ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই মেলার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বর্তমানে তিনি লেখালেখিতে সক্রিয় এবং সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর অবাধ বিচরণ। বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ছড়া, শব্দরম্য, নাটক, কলাম, উপসম্পাদকীয় ইত্যাদি প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে। এ পর্যন্ত তাঁর ৪০টির অধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা গ্রন্থের সংখ্যা বেশি। স.ম. শামসুল আলম বেশ কিছু সংগঠন থেকে সংবর্ধনা-সম্মাননা পেয়েছেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তাভীশ দীপঙ্কর গবেষণা পরিষদ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সম্মাননা-২০১৪, কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য কবি ওমর আলী সাহিত্য পদক-১৪২২, ছড়াসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পদক-২০১৬, বাংলাদেশ শিশুসাহিত্য একাডেমি কর্তৃক মায়ের অলংকার গ্রন্থের জন্য কিশোরকবিতা সম্মাননা-২০১৬ প্রভৃতি। বর্তমানে তিনি নির্মাণ ও আবাসন ব্যবসার সাথে জড়িত। শিশু-কিশোর সংগঠন আনন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি দুই সন্তানের জনক- কন্যা শামাদান উফা ও পুত্র আনজাম আনন। স্ত্রী নিগার সুলতানা জুঁই।